অবশেষে সাত বছর আগে মিরপুরে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী খাদিজাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এই টাকা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে খাদিজার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় মামলা না নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই সুপারিশ ৩ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে তা কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। এই সুপারিশ সম্বলিত রায়ের কপি শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
খাদিজার ওপর নির্যাতনের অভিযোগের শুনানি নিয়ে সোমবার কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের কথা কালের কণ্ঠকে অবহিত করেছেন খাদিজাকে আইনি সহায়তা প্রদানকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এই রায় দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কমিশনের কাছে খাদিজার বিচার চাওয়া নিয়ে রবিবার কালের কণ্ঠে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুরের একটি বাসায় যখন মা হারা খাদিজাকে উদ্ধার করে পুলিশ তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর। নির্যাতনের শিকার খাদিজাকে পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে সেদিন। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা গৌরীপুর গ্রামের টিটু মিয়ার মেয়ে খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর পুলিশ মামলা না নেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ (সিসিবি) ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করা হয়। কিন্তু কমিশন ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সিসিবি ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গতবছর ১১ নভেম্বর সংক্ষিপ্ত রায় দেন। তবে গত ২৪ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ৫ দফা নির্দেশনা ও ৪ দফা অভিমত দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, এই রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজা নির্যাতনের বিষয় শুনানি সম্পন্ন করে প্রতিকার দিতে হবে। যদি খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে খাজিদার জন্য সরকারের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণের সুপারিশ পাঠাতে হবে। রায়ের কপি পাবার পর কমিশন বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ভার্চুয়ালি শুনানি সম্পন্ন করে। ওই শুনানিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুইজন প্রতিনিধিও অংশ নেন। খাদিজাও শুনানিতে অংশ নেন। সে এখন সাবালিকা। সে মানবাধিকার কমিশনের কাছে বিচার দাবি করে সাতবছর আগে তার ওপর চালানো নির্যাতনের। শুনানি শেষে গতকাল কমিশন চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। এতে খাদিজার ওপর নির্যাতনের প্রমান পেয়েছে কমিশন। একইসঙ্গে খাদিজার মানবাধিকার লংঘনেরও অভিযোগের প্রমান পেয়েছে। এ অবস্থায় খাদিজাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিতে সুপারিশ করেছে কমিশন।