নড়াইল সদর উপজেলার জুড়ালিয়া আলিম মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষসহ ৫টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্ত্রী অফিস সহকারী পদের জন্য আবেদন করলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি রয়েছেন। কয়টি পদে নিয়োগ দেয়া হবে তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনকারীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই পোস্টাল অর্ডারের টাকা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। মোট ৫টি পদের জন্য ৬৮জন আবেদন করলেও ৩জনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নৈশ প্রহরী পদে ৯ মাস পূর্বে একবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও তা নতুন বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুড়ালিয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক জমাকৃত আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির এক সদস্য এই নিয়োগের ব্যাপারে জানান, নতুন সৃষ্ট বৃদ্ধিপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারি কাম হিসাব সহকারি, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর, আয়া ও শূন্যপদে নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় অনেকটা অস্পষ্টভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহকারী, আয়া ও নৈশ প্রহরী পদে কতজন করে নিয়োগ দেয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গত ২০ অক্টোবর নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক (অবঃ) জুড়ালিয়া এলাকার এম এম আমজাদ আলীকে আহ্বায়ক এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের ইংরেজী শিক্ষক আব্দুল হালীম, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য হুমায়ুন কবীরসহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইকালে তারা আবেদনপত্রের সাথে কোন পোস্টাল অর্ডার পাননি। নিয়োগ বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা বা সদস্যের কোন আতœীয় নিয়োগের আবেদন করলে ওই কর্মকর্তা বা সদস্য নিয়োগ বোর্ডে অথবা নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ আতাউর রহমানের স্ত্রী সারমিন সুলতানা অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের একজন প্রার্থী হলেও নিয়োগ বিধি উপেক্ষা করে মাদ্রাসার সভাপতিকে নিয়োগ বোর্ডে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। নৈশ প্রহরীর শূন্য পদে ৮জন আবেদন করেছেন। প্রায় ৯ মাস পূর্বে নৈশ প্রহরী পদে আরও একবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এবং সে সময় ৯জন আবেদন করেন। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে আগে গ্রহণকৃত আবেদনের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য বা নতুন করে আবেদনের কথা কিছু লেখা নেই। মাদ্রাসায় ৫টি পদে ৬৭জন আবেদন করলেও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং নৈশপ্রহরী পদের ৩জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে তাদের নিয়োগ পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এসব অনিয়মের ব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম এ প্রতিনিধিকে বলেন, কাউকে নিয়োগের নিশ্চয়তা দেওয়া বা কারও কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়নি। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি পরে শুনেছেন। এছাড়া সভাপতির কোনো আতœীয় নিয়োগ প্রার্থী হলে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি থাকতে পারবেন না, এ সম্পর্কে নিয়োগ বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। নিয়োগ প্রার্থী বেশী হওয়ায় একদিনে যাতে ঝামেলা না হয় সেজন্য ৩টি পদে নিয়োগ দেয়ার চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে পোস্টাল অর্ডার ভাঙ্গিয়ে সব টাকা মাদ্রাসার ব্যংক একাউন্টে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোনো ভুল নেই বলে জানান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ আতাউর রহমানকে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিডি মোঃ সাইফুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটিকে অবগত না করে পোস্টাল অর্ডার ভাঙ্গানো অপরাধের সামিল। এখানে আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির কোনো আতœীয় প্রার্থী হলে তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষার সভাপতি হিসেবে থাকতে পারবেন না। এছাড়া কাউকে চাকরি দেয়ার নাম করে যদি অর্থ নেওয়া হয় তাহলে এর প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় শুনে মনে হচ্ছে এখানে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কোনো অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে এবং সামগ্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে ত্রুটি রয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
সূত্র – সমাজের কথা