আজ - বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৮:৩৩

পল্লীবন্ধু খ্যাত এরশাদ মারা গেছেন।

ঢাকা: দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগার পর মারা গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আন্তঃবাহিনী ও জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান এবং এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেসসচিব সুনীল শুভ রায় বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
এরশাদ রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন এ অসুস্থতায় ভুগলেও অবস্থা অবনতির দিকে যাওয়ায় গত ২৬ জুন এরশাদকে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। এরপর সম্প্রতি তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

চিকিৎসাধীন এরশাদের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে গত শনিবারই (১৩ জুলাই) তার ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছিলেন, ‘এরশাদের কোনো অঙ্গ আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। প্রতিদিন ডাকলে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তা করেননি। আসলে তার বয়স হয়েছে। বয়সের কারণে যে উন্নতি হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।’

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি পদে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় নয় বছর সরকার চালানো এরশাদ আমৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

একনজরে এরশাদ

এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মশহরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে নিয়োগ লাভের মধ্য দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন এরশাদ। তিনি ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভের পর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে এবং পরবর্তীতে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে নিয়োগ দেন তৎকালীন সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মেজর জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে এলে এরশাদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ চিফ অব আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ হতে থাকে এরশাদের। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে উৎখাত করে এরশাদ সংবিধান রহিত করে সংসদ বাতিল করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এরপর এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন। যদিও বিচারপতি চৌধুরীর কোনো প্রকার কর্তৃত্ব রাখেননি এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসনের পর রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে এ পদেই বসে যান।

এরপর ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এরশাদ। নবগঠিত এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তিনি, মহাসচিব নিযুক্ত করেন অধ্যাপক এমএ মতিনকে। এরমধ্য দিয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন এরশাদ। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে এরশাদ তার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এ পদে নির্বাচিত হওয়ার পর সে বছরের ১০ নভেম্বর তৃতীয় জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন আহবান করেন। সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী আইন পাশ করে সেদিন জাতীয় সংসদ সংবিধান পুনর্বহাল করে। তবে বিরোধী দলগুলোর প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর এরশাদ ফের সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। প্রধান বিরোধী দলগুলো ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনও বর্জন করে।

এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অবিরাম আন্দোলন চলতে থাকে এবং প্রবল গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এরপর ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেপ্তার হন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে কারান্তরীণ অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। তখনকার সরকার এরশাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা করে। এর কোনো কোনোটিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৯৬-এর সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি

আরো সংবাদ