আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১:৪০

প্রত্যাহারের পরেও মৎস্য ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখালেন ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।। ‘তোমার ক্রস ফায়ারের অর্ডার হয়ে গেছে, বাঁচার একটা পথ আছে। আমি যখন রেকর্ড চালু করবো তখন যেভাবে বলবো সেভাবেই তুমি বলবে। এরপর তাঁর কথা মতো যা বলছি তা রেকর্ড করলেন। এরপর বললেন, যদি কোনো সাংবাদিক বলে কিংবা অন্য কেউ বলে তোমাকে কে মারছে। তুমি বলবা আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট মারেনি। সাংবাদিক আমাকে শেখায় দিছে। আমাকে কেউ মারে নাই। আর তুমি এখান থেকে সোজা রংপুর যাবা। গিয়ে মোবাইল বন্ধ করে রাখবা। বাড়ির কাউকে ফোন দিবা না ছয় মাস ওইখানে গুম হয়ে থাকবা। তোমার কোনো কিছু চাওয়ার থাকলে আমার নম্বর দিলাম এই নাম্বারে ফোন দিবা টাকা পৌঁছে দিবো।’

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে জেলা কারাগার থেকে বের করে গাড়িতে নিজের বাসায় নিয়ে বিশ্বনাথ নম দাসকে (৩৪) এভাবে হুমকি-ধামকি দেন। এরপর আবার গাড়িতে করে তাকে খলিলগঞ্জ বাজারে নিয়ে রংপুরগামী বাসে তুলে দিতে চেষ্টা করেন সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডিপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন।

‘আর এ পরিস্থিতিতে একটু পরে যাচ্ছি বলে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে জেলা শহরের বানিয়াপাড়া এলাকার বোন শুকলা দাসের বাড়িতে চলে যান বিশ্বনাথ নম দাস। তারপর বোন-ভগ্নিপতি সকাল ১০টার দিকে তাকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। জেনারেল হাসপাতালের সার্জারির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন বিশ্বনাথ নমদাস। সেখানে বেডে শুয়ে মঙ্গলবার সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গিরাই নদীর মধ্যে অবিস্থিত জলাশয় দেবীকুড়ায় দীর্ঘদিন থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন বিশ্বনাথ নমদাস, মোখলেছ ও আব্দুল কাফি আঙ্গুরসহ সুফলভোগীরা।
পরবর্তীতে এটি উন্মুক্ত জলাশয় ঘোষণা করা হলে সুফলভোগীরা এনিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। এরপর দীর্ঘদিন সেখানে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় আরডিসি নাজিম উদ্দিন চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাহারার ঘর পুড়িয়ে দিয়ে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দেবীকুড়ার দখল নেন।
পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বাড়িতে হামলা চালিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালজ এবং মারপিট করে বিশ্বনাথ নমদাদ এবং আঙ্গুরের পিতা খালেকুজ্জামান মজনুকে ধরে নিয়ে এসে রাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিশ্বনাথকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেন। আর খালেকুজ্জামান মজনুকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে রাতেই কারাগারে দিয়ে আসেন আরডিসি নাজিম উদ্দীন।
মঙ্গলবার দুপুরে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের পঞ্চায়েত পাড়া গ্রামে গেলে আরডিসির নির্যাতনের শিকার খালেকুজ্জামান মজনু (৭০) জানান, তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় দুই লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দিবেন বলে প্রস্তাব দেন আরডিসি। কোনো দোষ করিনি টাকা দিবো কেন বলায় নিয়ে গিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ছেলেরা পরদিন প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে তাকে জামিনে মুক্ত করে এনেছেন।
এদিকে জামিন প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির জানান, বিশ্বনাথ নমদাসের নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে হিসেবে চলতি মার্চ মাসের ১ তারিখে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে আপিল, জামিন ও নথি তলবের আবেদন দাখিল করেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেলে শুনানির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে তাকে ডাকা হয়। তিনি বিকেল ৪টা ৪০মিনিটে শুনানি শুরু করেন। এরপর ৫টার মধ্যে শুনানি শেষ হলে জামিন মঞ্জুর করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে জামিনের আদেশ কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান জানান, সোমবার জামিন আদেশ আসার আগেই হাজতিদের লকআপে নেয়ায় তাকে ছাড়া সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এসএম ছানালাল বকসী বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে এই গর্হিত কাজের জন্য আরডিসি নিজাম উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আরডিসি নাজিম উদ্দীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি দাবি করেছেন, বিশ্বনাথের জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। নিয়ম অনুযায়ী, তার জামিন হয়েছে। এছাড়া যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হয়ে তাতে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই দুনিয়ায় থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এগুলো সত্য নয়।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে কৃষ্ণপুর চরুয়াপাড়া এলাকার বাড়িতে গিয়ে আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে জোরপূর্বক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে মাদক মামলায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অন্যদের সঙ্গে নাজিম উদ্দীনকে প্রত্যাহার করায় তিনি মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে কুড়িগ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। নাজিম উদ্দীন কুড়িগ্রাম জেলায় সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর যোগদান করেন এবং ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর আরডিসি’র দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

আরো সংবাদ