প্রকাশিত : » ৩০ জুন ২০১৭, সময়: » ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ, পঠিত: » 2146 views
প্রস্তাবিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে নানা বিতর্ক-সমালোচনার পর অবশেষে সংশোধিত আকারে বুধবার সংসদে পাস হয়েছে অর্থবিল। অর্থমন্ত্রী এক মাস আগে যখন প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, তখন থেকেই দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। বিশেষত প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন ও ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক আরোপের বিষয় দুটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। ব্যাংকের গ্রাহক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণ মানুষ অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন ও আবগারি শুল্কের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠলে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে বিষয় দুটিতে পরিবর্তন আনা হয়। পাসকৃত অর্থবিল অনুযায়ী বিতর্কিত ভ্যাট আইনটি আগামী দু’বছরের জন্য স্থগিত থাকবে। ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাবেও সংশোধন করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এক লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতে শুল্ক আদায় করা হবে না; এরপর পাঁচ স্তরে সংশোধিত হারে আদায় করা হবে- পাঁচ লাখ পর্যন্ত ১৫০ টাকা, দশ লাখ পর্যন্ত ৫০০ টাকা, এক কোটি পর্যন্ত ২৫০০ টাকা, পাঁচ কোটি পর্যন্ত ১২০০০ টাকা এবং তদূর্ধ্ব ২৫০০০ টাকা আবগারি শুল্ক।এবারের বাজেট অধিবেশনে একটি বড় সুখবর তৈরি হয়েছে। আর সেটি হল, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে খোদ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তারা অর্থমন্ত্রীর খেয়াল-খুশির চেয়ে জনগণের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের কাছ থেকে এমনটাই ছিল কাম্য। প্রধানমন্ত্রীও সংসদে তার বক্তৃতায় বলেছেন, প্রমাণিত হয়েছে সংসদ গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু।
এটা নির্দ্বিধায় বলা চলে, অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবকালে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার কথা না ভেবে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সংশ্লিষ্টদের কথা আমলে নিলে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এত হইচই হতো না। আমরা মনে করি, প্রতিবছর বাজেট প্রণয়নের আগে স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংসদে তার বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি ব্যাংকলুটেরা ও রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করে তাদের বিচার চেয়েছেন। বাস্তবিকই, ব্যাংকলুটেরাদের কারণে ব্যাংকগুলোর এখন বেহালদশা। এ অবস্থা মোকাবেলার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার চেষ্টা না করে জনগণের ওপর কর আরোপ করা অন্যায়। জনগণের টাকা লুট হবে আর তার খেসারত দিতে হবে জনগণকেই- এটা কোনো কথা হতে পারে না। দেশে যদি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা থাকত, তাহলে জনগণকে এতটা করের বোঝা বইতে হতো না নিশ্চয়ই। সাবেক রাষ্ট্রপতির বক্তব্য আমলে নিতে হবে অবশ্যই। ব্যাংকলুটেরাদের বিচার না হলে ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের ছোটখাটো পরিবর্তন প্রতিবছরই হয়ে থাকে; কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করার মতো বড় বিষয়টি এ দেশের বাজেট ইতিহাসে এটাই প্রথম। বস্তুত প্রচণ্ড জনমতই এ পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পাসকৃত অর্থবিলের ফলে রাজস্ব আদায় কম হবে সত্য, উন্নয়ন বাজেটেও পরিবর্তন আনতে হবে; তারপরও আমরা বলব পাসকৃত অর্থবিলটি প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে ভালো,
বেশি গণমুখী।