আজ - রবিবার, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, (বসন্তকাল), সময় - বিকাল ৫:১৮

প্রায় ৩ যুগ ভাত না খেয়ে বেঁচে আছেন জোহরা বিবি

মাছে ভাতে বাঙালি বাংলাদেশের একটি বহু প্রচলিত প্রবাদ।বাঙালির প্রধান খাবার ভাত। ভাত আমাদের শরীরের শর্করা উৎপাদনের প্রধান উৎস। ভাত শরীরের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শক্তির জোগান দেয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জলবায়ু ধান উৎপাদনের উপযোগী হওয়ায় হাজার হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের সকলের প্রিয় খাবার ভাত। ভাত ছাড়া তিন বেলা খাওয়ার কথা বাঙালি কল্পনাও করতে পারে না। তাই কেউ যদি ৩৬ বছর ভাত না খেয়ে দিব্যি সাধারণ জীবনযাপন করছে এমন কথা শুনলে অবাক না হয়ে পারা যায় না।
সাতক্ষীরা শহরতলী কুখরালী গ্রামের ৮৫ বছরের বয়োবৃদ্ধা ১৫ সন্তানের জননী জোহরা বিবি গেলো ৩৬ বছর যাবৎ ভাত না খেয়েই রয়েছেন দিব্যি সুস্থ। জোহরা বিবি কয়েক বছর পূর্বে অজু করতে যেয়ে পড়ে সামনের চারটি দাঁত হারায়। পরে আরও দু’টি দাঁত হারান এই বৃদ্ধা।

দন্তহীন মুখে ধীরে স্পষ্টভাবে জোহারা বিবি বলেন, আমার আব্বা মান্দার মোড়ল ভারতের বশিরহাট থানার মেজ দারোগা ছিল। সাকচুড়া আমাদের গ্রামের নাম। ছোট বেলায় আব্বা আমার মোড়ল পরিবারে বিয়ে দেয়। আমার বয়স যখন তের বছর তখন আমার বড় ছেলের জন্ম হয়। বড় ছেলের বয়স এখন ৭১ বছর। আল্লাহ আমার ১৫ জন সন্তান দিয়েছে। আমার দুই জন ছেলে ও তিন জন মেয়ে মারা গেছে। আল্লাহর রহমতে ১০ জন সন্তান জীবিত আছে, সাত জন ছেলে ও তিন জন মেয়ে।আমার ছোট ছেলের জন্মের দুই তিন বছর পর আমার পেটে অনেক ব্যথা যন্ত্রণা হত। ছেলেরা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পেট কাটতে হবে জানায়। কিন্তু আমি তো পেট কাটবো না। পেটের যন্ত্রণায় আমার খাওয়া কমে যায়। তখন আমি শাকসবজি, তরিতরকারি আর মুড়ি খেতাম। এর পর থেকে আমার পেটের যন্ত্রণা ধীরে ধীরে কমে যায়।এরপর থেকে আমি আর কখনো ভাত খায়নি। এখন সকালে বিস্কুট আর চা, দুপুরে মুড়ি ভিজিয়ে তরিতরকারি দিয়ে খায়, কখন কখন অল্প মাছ ও মাংস খাই, আর রাতে বিস্কুট আর চা খাই। আমি চশমা ছাড়া কোরআন শরিফ পড়তে পারি, তবে চশমা পড়লে ভাল হয়। পরদা শীল জোহরা বিবি হাসতে হাসতে বলেন শরিল (শরীর) আর আগের মত নেই, আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে, বয়স হচ্ছে তোজোহরা বিবির বড় ছেলে নুর ইসলাম মোড়ল জানান, মার ছোট বেলা থেকে পেটে একটু ব্যথা যন্ত্রণা ছিল। ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে পেটের যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। আমরা মার ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার জানায় টিউমার হয়েছে অপারেশন করতে হবে। কিন্তু মা অপারেশন করবে না। ডাক্তারের ওষুধ খায় আর মা ভাত খাওয়া বাদ দেয় এতে মার পেটের যন্ত্রণা ধীরে ধীরে কমে যায়।১৯৮৫ সালের পর থেকে মা আর ভাত খায়নি। মা ভাত না খাওয়ায় প্রথমে আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম কিন্তু মা সুস্থ থাকায় আমাদের চিন্তা দূর হয়। তারপর থেকে মা যা খেতে চায় তা খাওয়ানোর চেষ্টা করি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি মা সুস্থ থেকে বাকী জীবন পার করতে পারে।

আরো সংবাদ