রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দুই মালিক এস এম এইচ আই ফারুক ও তাসভির উল ইসলামকে রিমান্ড শেষে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।বানানী থানায় করা মামলায় মোট চারটি ধারা উল্লেখ করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, প্যানেল কোড ৪৩৬/৩০৪ ক /৪২৭ এবং ১০৯ ধারায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটির নির্মাণ থেকে শুরু করে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সবক্ষেত্রে ত্রুটি ছিল। সেজন্য পারস্পরিক যোগসাজশে অবহেলা এবং উদাসীনতার কারণে হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।অভিযুক্তরা পারস্পরিক যোগসাজশ করে ভবন নির্মাণের নকশার বাইরে ১৮ তলা থেকে ২৩ তলা করেছে। ভবনে জরুরি সিঁড়ি যা ছিল বলে বলা হচ্ছে, সেটাকে বিকল্প সিঁড়ি বলা যায় না। এরকম অনেক ক্রুটি ছিল। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে অবহেলা জনিত প্রাণহানির অভিযোগ আনা হয়েছে ৩০৪ এর ‘ক’ ধারায়।এসব অভিযোগের বিচার কোন আইনে হবে? বহুতল ভবনে ঝুঁকি বা কোনো ঘাটতির বিষয়ে আইনেই বা কী বলা হয়েছে?মামলায় যে ধারাগুলোর মাধ্যমে অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ৪৩৬ ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অপর কোনো ব্যক্তির ঘরে অগ্নিসংযোগ করার সাজা। কোনো ব্যক্তি যদি তার বাড়িকে বিষ্ফোরক দ্রব্য বা অগ্নিযোগ্য কোন পদার্থ ব্যবহার করে ক্ষতি সাধন করে। এই ধারায় যাজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে অথবা যে কোন দণ্ডের সাজাসহ অর্থদণ্ড হতে পারে।৩০৪ (ক) ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অবহেলা করে বা অনিচ্ছাকৃত অপর কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর সাজা। কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো ব্যক্তির কাজের ফলে অবহেলা বা অনিচ্ছাকৃত। এই ধারায় যাবৎজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছরের জন্য যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ড বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।৪২৭ ধারায় বলা আছে – কোনো শক্তিপ্রয়োগ করে কারও সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়া বা বেআইনিভাবে কাজ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাত দেয়া হয়। এই ধারায় দশ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনা শ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড হতে পারে।১০৯ ধারায় বলা আছে- দুষ্কৃতী কাজের জন্য সহায়তা করা। কোনো অপরাধমূলক কাজ করার জন্য অনুপস্থিত থেকে সহায়তা করার সাজা। এতে অপরাধী যে অপরাধ করবে অপরাধীকে সহায়তা করার জন্য একই সাজা হতে পারে।ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, একটি মামলার বিচার প্রক্রিয়া তিন ধাপে হয়। প্রি-ট্রাইয়াল, ট্রাইয়াল এবং পোস্ট ট্রাইয়াল। প্রি-ট্রাইয়ালে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, সেটা মেজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়া এবং পুলিশের চার্জশিট জমা দেওয়া। এরপর ট্রায়ালে অভিযোগ গঠন এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া। পোস্ট ট্রাইয়ালে তাকে সাজা দেওয়া। এতগুলো ধাপ পার হয়ে সাজার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিক ধাপ এফ আই আর বা মামলা। সেই মামলার ধারাগুলো শক্ত হওয়া জরুরী। কিন্তু এই মামলায় ধারাগুলো মজবুজ হয় নাই। তবে এটা সামলে নেওয়া যায় তদন্ত প্রতিবেদনে বা চার্জশিটে।গোয়েন্দা পুলিশের ঢাকা উত্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলা একটা প্রাথমিক কাজ। দ্রুত কাজটি করার কারণে প্রাথমিকভাবে কাজটি হয়তো সঠিক ধারাগুলো প্রযোগ করা হয় নাই। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন বা চার্জশিটে তথ্য উপাত্ত তদন্তের সাপেক্ষে সঠিক চিত্র উপস্থাপন করা হবে। আইনজীবীরা বলছেন, এর আগে বিভিন্ন সময় অবহেলাজনিত কারণে প্রাণহানি বা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তের পর সেগুলোকে সরাসরি হত্যা মামলায় রুপান্তর করা হয়েছে। তবে সেটা তদন্তে পাওয়া তথ্য প্রমাণের ওপর নির্ভর করে।ফৌজদারী আইনের আইনজীবী শামীম আরা শাম্মী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার বিচারের আইনেও এখন জামিন অযোগ্য করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে এই আইনেই কঠোর ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
উপ-সম্পাদকীয়