বিশেষ প্রতিনিধি: মোংলা বন্দরের সম্পত্তি শাখার নিজেস্ব জায়গা বরাদ্ধ না দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল রেখে দুনিতর্ীর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
বন্দর কর্তৃপক্ষে জায়গায় কোন প্রতিষ্ঠান ব্যাবহার করতে চাইলে তা আগে থেকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের আগোচরে দুনিতর্ী আর অনিয়ম করে যাচ্ছে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী। সম্প্রতি স্থায়ী বন্দরের (নতুন নির্মানাধীন সাইফ পোর্ট সংলগ্ন) দক্ষিন পার্শ্ব এলাকায় একটি বড় মাপের জায়গায় কাউকে না জানিয়ে অবৈধ ভাবে পাথরসহ অন্যান্য মালামাল রেখে ওই সংঘবদ্ধ গ্রুপটি হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকা।
ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সুত্রে জানায় যায়, গত প্রায় সাড়ে ৪ মাস পুর্বে বন্দরের ইঞ্জিনিয়ার ভবনের উত্তর পাশে নতুন নির্মানাধীন সাইফ পোর্ট সংলগ্ন বন্দরের সম্পত্তি শাখা থেকে ১৬৭৩ বর্গ মিটার একটি জায়গা বরাদ্ধ নেয়ার জন্য আবেদন করেন একটিভ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
কিন্ত তার আবেদন কোন আমলেই নেয়নী বন্দর কর্তৃপরেক্ষ সম্পত্তি শাখা। জমি বরাদ্ধ না দিয়ে গোপনে আতাত করে ওই ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের দেয়া আবেদনের জায়গায় রহস্য জনক ভাবে পশুর নদী থেকে পাথর এনে মজুত করে রাখে আবেদনকারী একটিভ নামের প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ অন্য ব্যাবসায়ীদের।
বন্দরের নিজেস্ব জায়গায় ওই প্রতিষ্ঠান পাথর মজুদ করার পুর্বে অন্য একটি বিদেশী চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্ধ থাকাকালীন তার ব্যাবসা গুটিয়ে নিয়ে চলে যায় চায়না প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠান চয়ে যাওয়া তাদের রেখে যাওয়া মালামাল বন্দর কর্তৃপক্ষ দর পত্রে মাধ্যমে নিলামের বিক্রি করে দেয়। নিলামে বিক্রি করা মালামাল সরিয়ে নেয়ার আগেই ওই একই জায়গায় পাথর মজুদ করে একটিভ নামের প্রতিষ্ঠান। কিন্ত জমি বরাদ্ধ না নিয়েই তার ইট পাথরের ব্যাবসা চালিয়ে যায় বীরদর্পে।
সে সময় বন্দরের সম্পত্তি শাখার প্রসাশন বিভাগের উর্ধতন উপ-ব্যাবস্থাপক ডি এম রওশন আলী গত ৯ নভেম্বর নিজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই জমিতে থাকা ইট-পাথরসহ অন্যান্য মালামাল যাতে কোন প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন ব্যাক্তি নিতে না পারে সে ব্যাপারে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বন্দরের উর্ধতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে নিরাপত্তার প্রসঙ্গে অবহীত করেন।
বন্দরের জমি বরাদ্ধ নিয়ে ব্যাবসা করার জন্য অনেক ব্যাবসায়ী আবেদন করেও না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বিষয়টি বন্দরের ব্যাবসায়ীক মহলে জানাজানি হলে বন্দরে সম্পত্তি শাখার ঠিক একই কর্মকর্তা ১৩ ডিসেম্বর মজুত করা ইট পাথর আগামী ১০ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার জন্য তাগিদ দেন তিনি। এ ব্যাপারে বন্দরের ব্যাবসায়িদের মধ্যে নানা ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যাবসায়ী জানায়, কর্তৃপক্ষের নিয়োমানুযায়ী বন্দরের কোন জায়গা বরাদ্ধ নেয়া ব্যাতিত ব্যাবসায়ীক সুত্রে অবৈধ ভাবে ব্যাবহার, কোন পন্য বা মালামাল মজুত করলে তা বন্দরের নিজেস্ব সম্পদ হিসেবে গন্য হবে। কিন্ত পাথর মজুদ করা প্রতিষ্ঠান বরাদ্ধ না নিয়ে ১৬৭৩ বর্গ মিটার জায়গা মাসের পর মাস পাথর বোঝাই করে তা বিক্রি করছে এবং তার ব্যাবসা পরিচালনা করছে।
তবে মনে হচ্ছে বন্দরের সম্পত্তি শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীসহ একটি সংঘবদ্ধ দীর্ঘদিন যাবত এ অবৈধ কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন এ ব্যাবসায়ীরা। ফলে এক দিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো। আর অন্যদিকে নদী পথে বন্দর কর্তৃপক্ষের ল্যান্ড ব্যাবহারের আইন লঙ্গন হচ্ছে। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সু-দৃষ্টি কামনা করাসহ এটি রোধ করতে পারলে বন্দরের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে জানায় বন্দর ব্যাবসায়ীরা।
মোংলা বন্দরের সম্পত্তি শাখার ল্যান্ড সার্ভেয়ার আবুল খায়ের বলেন, একটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান বন্দরের জমিতে পাথর রাখেন ব্যাবসার জন্য। ওই প্রতিষ্ঠানকে বন্দরের সম্পত্তি শাখার উর্ধতন কর্মকর্তারা মৌখিক ভাবে পাথর রাখার জন্য অনুমতি দিয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ও বিষয়টি অবগত আছেন। এছাড়া যতদিন একটিভ নামের প্রতিষ্ঠান ওই জমিতে পাথর মজুত করে রেখেছে, ততদিনের বন্দরের খাজনা হিসেব কিছু টাকা দিয়েছে এবং বাকি টাকাও পরিশোধ করে তার মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য ১০ দিনের সময় বেধে দিয়েছে সম্পত্তি শাখা বলে যান তিনি।