বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় গণধর্ষণ মামলায় সাক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলার আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। রবিবার (১ নভেম্বর) নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকি গ্রামের সেকান্দার জোমাদ্দারের ছেলে কাকচিড়া ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মো. এমাদুল হক। তিনি আট মাস ধরে জেলহাজতে রয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ওই একই গ্রামের খবির গাজীর ছেলে মোহসিন ও অহেদ খানের ছেলে মোয়াজ্জেম। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও খালাস পাওয়া আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক গৃহবধূ তার কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এমাদুল হক ছিল চার নম্বর সাক্ষি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, অভিযোগকারী দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে পড়াশোনা শেষে ২০১৫ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় প্রকৃতির সাড়া দিতে বাহিরে বের হলে খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা তার মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
এরপর বাদী ঘুম থেকে উঠে তার মেয়ের রুমে গিয়ে মেয়েকে না দেখে ঘরের বাইরে খোঁজ করতে গিয়ে মেয়ের জুতা ও ওড়না খুঁজে পান। এরপর খোঁজাখুঁজি করে তিনি বাড়ির সুপারি বাগান থেকে তার মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মূলত ওই গৃহবধূর মেয়েকে ধর্ষণ করেন এ মামলার চার নম্বর সাক্ষি এমাদুল হক। এরপর পূর্ব শত্রুতার জেরে তিনি এ ধর্ষণের অভিযোগ চাপিয়ে দেন তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে। আর নির্দোষ দুই অভিযুক্তকে ফাঁসাতে তিনি ওই গৃহবধূ সহায়তা নেন।
পরে মামলার বাদী আদালতে অভিযোগ করেন, এ মামলার সাক্ষি এমাদুল তার কন্যাকে ধর্ষণ করে। এরপর এ ধর্ষণের অভিযোগ তার প্রতিপক্ষ মহসিন ও মোয়াজ্জেমের কাঁধে তুলে দিতে নানা রকম ভয় দেখায়। তিনি নিরুপায় হয়ে মহসিন ও মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। ঘটনা জানাজানির পর এ মামলায় সাক্ষি এমাদুল আট মাস কারাভোগও করেন। পরে আদালত বাদী ও সাক্ষিদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে এমাদুল হককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এ বিষয়ে আসামির আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। এখন পর্যন্ত রায়ের কপি আমরা পাইনি।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। এমাদুল হক ওই সময় ইউপি সদস্য ও বারের অ্যাডভোকেট ক্লার্ক ছিল। প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকার কারণে একটি স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে নিজে ধর্ষণ করে অন্যদের বিরুদ্ধে বাদীকে বাধ্য করে মিথ্যা মামলা করায়। এই জঘন্যতম ঘটনায় এমাদুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য ছিল।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ