আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৫৬

বিশ্রী ও অশ্রাব্য বাক্যবাণে Rag day পালনে হারিয়ে যাচ্ছে বিদায় অনুষ্ঠানের আমেজ

মোঃ মহিউদ্দিন সানি।। তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। মাত্র তিনটি অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এমন কেন হয়? কারণ এই যে,বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের।

বাংলাদেশে স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের ধাপ টপকাতে আয়োজিত সকল বোর্ড পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের মঙ্গল কামনা করে দোয়ার আয়োজন কেই বলা হয় “বিদায় অনুষ্ঠান”।

এদিন স্মৃতিমাখা স্কুল, শ্রেনিকক্ষ, খেলার মাঠ সবকিছুই পর হয়ে যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপা কান্নায় গম্ভির হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। “বিদায় অনুষ্ঠান” শিক্ষকদের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দিন, মনের অজান্তে চোখের পানি ফেলে বন্ধু-বান্ধব থেকে বিদায় নেওয়ার দিন। দিনটি উপলক্ষে বিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথি মহোদয় পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতা দেন। জীবনে চলার পথের কিছু মূল্যবান পাথেয় দেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিদের উদ্দীপনাপূর্ণ ও আবেগঘন বক্তব্য শুনে অনেকেই কেঁদে ফেলে। সবশেষে দেওয়া নেওয়ার পর্বে উপহার সামগ্রী বিনিময়ের আয়োজন হয়।

শিক্ষকদের ভালোবাসা আর শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাবোধের এক মহাক্ষনকেই এখন নতুন ভাবে ডাকা হচ্ছে Rag day নামে। মূলত, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত ছিল Rag day  নামের শব্দটি। স্নাতকোত্তর পড়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে ছাত্রছাত্রীরা একটি বিদায়ী আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করত। এখন এস.এস.সি পরীক্ষার আগেই বিদায় অনুষ্ঠানের দিনকে Rag day এর আদলে পালন করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিন সাদা টি-শার্টে সকল বন্ধু ও শিক্ষকদের নাম লেখা,দুষ্টু-মিষ্টি দাগাদাগি বা উপদেশ লিখে কিছু সময় আনন্দ উল্লাসের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দুঃখের এই দিনটি অনেকটা আনন্দে ভরে ওঠে।

কমলা বা কালো নয়, সবুজ বা হলুদও নয়; ধবধবে সাদা টি-শার্ট ৷ ক্যাম্পাস জীবনের কাটানো দীর্ঘদিনের বন্ধুদের লেখায় ভরা টি-শাটের্ কেউ একজন লিখে দিবে, ‘ভুলে যাবি না তো বন্ধু, ভালোবাসি রে খুব’৷ এভাবেই মনের অজানা কথাগুলো প্রিয় বন্ধুদের সাদা টি-শার্টে লিখে দেয় সহপাঠিরা। উদ্দেশ্য একটাই-আনন্দ আর আজীবন এই স্মৃতি অমলিন করে রাখা। এ আয়োজনে বন্ধুদের দেয়া রঙে পুরো ক্যাম্পাসসহ নিজেরা রঙিন হয়। হালকা শীতের আমেজ আর সকালের সূর্যের আলোয় বিদায় বেলায় ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি আর ভালোলাগা, ভালোবাসা অমলিন করে রাখতেই এমন আয়োজনকে সাধুবাদ।

কিন্তু এসবের নামে টিশার্টে যত বাজে ভাষার ব্যাবহার, ডিজে গান এ মেতে ওঠা, অশালীন ডান্স এর মাধ্যমে আর যায় হোক “বিদায় অনুষ্ঠান” হতে পারে না। আধুনিকতার যুগে আয়োজনের উদ্দেশ্য যদি বিফল হয় তবে এ আয়োজনের দরকার কি? কিছু বখাটে শিক্ষার্থীর নোংরা সাহসের পরিণতি কতটা খারাপ হচ্ছে? অশ্রদ্ধা নিয়ে বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি উদযাপন কখনই ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছে না।

আগামী ১৪ ই নভেম্বর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আয়োজিত এস.এস.সি পরীক্ষার কয়েকদিন বাকি থাকতেই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনেক প্রতিষ্ঠান “বিদায় অনুষ্ঠান” আবার অনেক স্কুলেই Rag day নামে দিনটি পালন হচ্ছে।

Rag day তে আজীবন স্মৃতি অমলিন করে রাখতে পাওয়া সাদা টি শার্টে বিশ্রী ও অশ্রাব্য বাক্যবাণে এ আয়োজনের ষোল আনাই বৃথা হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এসব নোংরা ভাষায় লেখা প্রলাপগুলোর ফটো ভাইরাল হচ্ছে। দেশব্যাপি সমালোচনার মুখে পড়েছে Rag day নামের এই আয়োজন। এসব মন্দ কাজকে “না” বলে, সকল আয়োজনের যথাযথ পালন হলেই বোধহয় আমরা মানুষ হবো। সব অপশক্তি আর অলস মস্তিষ্কের বধ হোক এই প্রত্যাশায় ভালো হোক সকল সোনামনিদের এস. এস. সি পরীক্ষা।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত