যশোরে সাইদুল ইসলাম সাঈদ ওরফে ভাইপো সাঈদ নামে এক যুবককে গুমের অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রোববার আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, সদর পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন টিএসআই রফিকুল ইসলাম, কোতয়ালি থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই এইচ এম শহিদুল ইসলাম, এসআই আমির হোসেন, এএসআই হাসানুর রহমান, এএসআই রাজন গাজী, এএসআই সেলিম মুন্সী, এএসআই বিপ্লব হোসেন, এএসআই সেলিম আহমেদ, কনস্টেবল আরিফুজ্জামান, রমজান (চালক), হাবিবুর রহমান, আবু বক্কার, মিজান শেখ (চালক), মাহমুদুর রহমান, রাজিবুল ইসলাম ও টোকন হোসেন এবং পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, শহরের নাজির শংকরপুর সাদেক দারোগার মোড় এলাকার নুর ইসলাম নুরু, আনিস, শংকরপুর মুরগির ফার্ম এলাকার অভ্র, চাঁচড়া রায়পাড়ার হাসমত, মাসুম ও শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার খালেদুর রহমান চুন্নু।
গুমের শিকার ভাইপো সাঈদের পিতা কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকন মামলাটি করেছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো.গোলাম কিবরিয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী আমিনুর রহমান।
কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকন মামলায় উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তার ছেলে সাঈদ বন্ধু শাওনের সাথে যশোর পৌরপার্কে ঘুরতে যান। দুপুর ১২টার দিকে তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে মামলায় উল্লিখিত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা পৌরপার্ক থেকে সাঈদ ও শাওনকে আটক করেন। ওই সময় কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী হীরা খাতুন বেঁচে ছিলেন। আটকের খবর পেয়ে কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকন এবং তার স্ত্রী হীরা খাতুন ইজিবাইকে করে পৌরপার্কে যান। তারা পুলিশ সদস্যদের কাছে সাঈদ ও শাওনকে আটকের কারণ জানতে চান। কিন্তু পুলিশ সেখানে কিছুই বলে না। তাৎক্ষণিক কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকন কোতয়ালি থানায় গেলে ডিউটিরত পুলিশ তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। তখন এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম ও এসআই আমির হোসেন এসে কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকনের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় সাঈদ ও শাওনকে মেরে লাশ গুম করে দেওয়া হবে। এ কথা শুনে সাঈদের মা হীরা খাতুন বাড়ি ফিরে যান। দুই দিন পর ৭ এপ্রিল হীরা খাতুন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন, সাঈদ ও শাওন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গেছেন। এরপর হীরা খাতুন ছেলে সাঈদ ও ছেলের বন্ধু শাওনকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ সুপার বাদে মামলায় উল্লিখিত ১৬ পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যের কাছে কয়েকদফা গেলে তারা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তখন কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকন ও হীরা খাতুনের ধারণা হয় যে, দাবিকৃত দুই লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়া কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সাঈদকে অপহরণের পর হত্যা এবং লাশ গুম করে ফেলেছে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার বাদে অপর ১৬ পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন হীরা খাতুন। পরে আসামি গোলাম মোস্তফা, নুর ইসলাম নুরু, আনিস, অভ্র, হাসমত, মাসুম ও খালেদুর রহমান চুন্নু ১০ লাখ টাকা দাবি করেন হীরা খাতুনের কাছে। তারা তাকে একথা বলেন যে, ১০ লাখ টাকা দিলে সাঈদকে ফিরিয়ে দেবে। এ সময় হীরা খাতুন তাদেরকে ১০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তারা ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর সাঈদকে ফেরত না দিয়ে উল্টো হীরা খাতুনকে ধরে শাহীন চাকলাদারের (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বাড়িতে নিয়ে যান এবং পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু হীরা খাতুন তাতে রাজী না হলে তাকে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে আদালতে করা মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। এই বৈদ্যুতিক শকের কারণে হীরা খাতুন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে তিনি মারা যান। কিন্তু কাজী তৌহিদুল ইসলাম খোকন অদ্যাবধি তার ছেলে সাঈদের কোনো খোঁজ পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা করেন।