শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৬) ভারতে পাচার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রোববার (২০ জুন) দুপুরে পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক।
এর আগে গত ৮ জুন যশোরের চাষাড়া এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে নারী ও শিশু পাচাররোধে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা। পরে তাকে সংস্থাটির সেফহোমে রাখা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ফেসবুকে পরিচয় সূত্রে প্রেম। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে গত ৭ জুন যশোর নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ৮ জুন ভোরে তাকে পাচারের উদ্দেশ্যে যশোরের চাষাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেয়া হয়। সেখানে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বেসরকারি সংস্থা অপারেশন জেনারেশনের নারী কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে মহিলা অধিদফতর নিয়ে যায়।
পরে যশোর মহিলা অধিদফতর থেকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসন থেকে বিকেলে ওই কিশোরীর পরিবারকে উদ্ধার হওয়ার খবর দেয়া হয়।
কিশোরীর পরিবার জানায়, সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের একটি গ্রামের ভ্যানচালকের মেয়ে ওই কিশোরী। তার মা প্রবাসে থাকায় বাবার সঙ্গেই মেয়েটি বসবাস করতো। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ে সে। একমাস আগে ফেসবুকে যশোরের আরএম রোড এলাকার এমডি শিহাব খান নামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় তার। গত ৬ জুন শিহাব কিশোরীকে বিয়ের কথা বলে যশোর যেতে বলেন। পরেরদিন কিশোরী রাত ৯টায় যশোরে পৌঁছায়। এরপর ওই যুবক তাকে মনিহার এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে যান।
কিন্তু কিশোরী হোটেলে থাকতে অনীহা প্রকাশ করেন। তখন তাকে শহরের বস্তিতে এক নারীর কাছে রাখা হয়। রাতেই কিশোরীর কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরেরদিন ভোর ৪টার দিকে তাকে নেয়া হয় চাষাড়া বাসস্ট্যান্ডে।
সম্প্রতি ভারতে নারী পাচারের বিভিন্ন ঘটনা দেশে আলোচিত হচ্ছে। ফলে প্রশাসন, নারী ও শিশু পাচাররোধে কাজ করা এনজিওগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করা রুটগুলোতে। ওই কিশোরীকে পাচার করা হচ্ছে এমন সন্দেহ হয় যশোরের বেসরকারি সংস্থা অপারেশন জেনারেশনের মাঠ তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনিতা সরকারের। তিনি তখন ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন। কিশোরী তাকে সব জানায়। ততক্ষণে ওই যুবক সেখান থেকে পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী বলেন, ‘একমাস আগে এমডি শিহাব খান নামের ফেসবুক আইডির মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয় আমাকে। তাই পালিয়ে যশোর যাই। বুঝতে পারিনি পাচারের জন্য ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি রক্ষা পেয়েছি।’
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে নিয়ে বাড়িতে থাকি। এরকম ঘটনা কীভাবে ঘটলো?- তা বুঝতে পারছি না। ৭ জুন দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি মেয়ে নেই। তার ফোন বন্ধ পাই। তার সাবেক স্বামীকে ফোন দিয়ে জানতে পারি সেখানেও যায়নি। তখন খুব চিন্তায় পড়ে যাই। এরপর ডিসি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি পাচারকালে মেয়ে যশোরে উদ্ধার হয়। এরপর ডিসি স্যার মেয়েকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ করেছি।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ‘কিশোরী যশোরে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন। তাকে উদ্ধার করার তথ্য তার পরিবারকে জানানো হয়। রোববার আমরা ওই মেয়েকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করি।’