আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৩:১২

ভারতে রাজনীতিবিদ খুনের মিশনে বাংলাদেশের ৪ জন

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করা সন্দেহভাজন চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের কথা সোমবার জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। কলকাতা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের তালতোর গ্রাম থেকে রোববার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বীরভূম জেলা পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, ওই চার বাংলাদেশিকে আত্মগোপনে সহায়তা এবং খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে স্থানীয় দুই ভারতীয় নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রেপ্তার ছয় জনের মধ্যে চারজনই বাংলাদেশি নাগরিক। এরা আসলে ‘কন্ট্রাক্ট কিলার’। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।”

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে নাইন এমএম পিস্তল, দেশি বন্দুক, বেশ কিছু কার্তুজ ও প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের মতে, বড় ধরনের হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ করেছিল।

অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের কথা চার বাংলাদেশি স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে তাঁদেরকে কারা সহায়তা করেছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা হলেন: ঢাকার রায়েরবাগের রফিক ফকির ওরফে বাবু সরকার, রামপুরার মুহাম্মদ মুরাদ মুন্সী, বুনিয়াপাড়ার ভিলা মিঞা ওরফে দিলওয়ার মিঞা ও খিলগাঁওয়ের মোহম্মদ বিলাল হোসেন।

অন্য আসামিরা হলেন, বীরভূমের শান্তিনিকেতনের খোশকদমপুরের সাহিদ আনোয়ার ও বোলপুরের বাসিন্দা শেখ কাজল।

সোমবার ধৃতদের বোলপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ছয় জনকেই পুলিশ রিমান্ডে পাঠান।

সরকারি কৌসুলী ফিরোজ পাল টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন, ষড়যন্ত্র ও ফরেনার্স আইনে মামলা করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশিদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। বাকি দুইজন নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করলেও তাঁরা পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি।

রাজনৈতিক নেতাদের খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে পুলিশ নানুর ও লাভপুরের বিভিন্ন জায়গায় আরো কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।

তবে কে বা কারা খুনের লক্ষ্যে বাংলাদেশিদের ভারতে এনেছে, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে বলে তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।

ওই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ধৃতরা জঙ্গি কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, ধৃতদের জেরা করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকে খুনের উদ্দেশ্যে এরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে একটি বাড়িতে আস্তানা গেড়েছিল।

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বোলপুরের স্থানীয় নেতা বাবলু সর্দার বেনারকে বলেন, “রাজনীতিবিদ খুনের জন্য যে পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে তার পেছনে বড়ো কোনো মাথা রয়েছে। একটি বিরোধী রাজনৈতিক দল রাজ্যে যেভাবে নির্বাচনের আগে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে এটি তারও অংশ হতে পারে।”

বহিরাগত এনে রাজনৈতিক নেতা খুনের ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির বীরভূম জেলার নেতা অমৃতলাল ঘোষ বেনারকে বলেন, “গোটা পশ্চিমবঙ্গ এখন বারুদের স্তূপের ওপর বসে রয়েছে। আর বীরভূমের সঙ্গে বারবার জঙ্গি যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।”

তাঁর মতে, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে খুনী ও সন্ত্রাসীরা বহাল তবিয়তে রয়েছে।”

ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করে জানা যায়, কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে​ এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সোমবার পর্যন্ত যোগাযোগ করা হয়নি। তাঁদের নাম-পরিচয় পেলে ঢাকার পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

ভারতে আল কায়েদার সদস্য গ্রেপ্তার

ভারতে আল কায়েদার সদস্যদের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে ছয়জন এবং কেরলের এর্নাকুলাম থেকে তিনজন সন্দেহভাজন আলকায়েদা জঙ্গিকে এনআইয়ের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করে। তাঁরা সকলেই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা।

এনআইএয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, মোট ৯ জনের এই দলটির পরিকল্পনা ছিল দিল্লির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা।

এনআইয়ের কৌশুলি শ্যামল ঘোষ বেনারকে জানান, “এরা প্রত্যেকেই আল কায়দার ভারতীয় শাখার সক্রিয় সদস্য।”

মুর্শিদাবাদ থেকে আল কায়েদা সদস্যদের গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমামরা গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের শেষে জানিয়ে দেন, দেশবিরোধী কোনো কাজ তাঁরা সমর্থন করবেন না। বরং তেমন কাজ কেউ করলে রুখে দাঁড়াতে হবে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত