আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৮:১২

ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য : মামুনুল-বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মামলা

ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জুনায়েদ বাবুনগরী ও সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলাটি করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বেলা ১১টার দিকে মামলা গ্রহণের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মামলার আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেছিলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর কায়েম হবে।’

একইদিন আসামি সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ‘আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক, কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে।’

মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জোনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে বলেন, ‘মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না।’

তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং ওই ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে।’

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে মামলার বাদী দাবি করেছেন, আসামিরা এ-রূপ ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা ও সুযোগ-সুবিধা লাভের হীনউদ্দেশ্যে বিদেশি শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ধর্মের লেবাসে সাধারণ মুসলমানদের উসকানি দিয়ে, ক্ষেপিয়া তুলে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুর ভাব সৃষ্টি করেছে। যার ফলশ্রুতিতে আসামিদের নির্দেশে মধুদার ভাস্কর্য ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মিত ভাস্কর্যসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে। এ-রূপ প্রচারণা ও উসকানি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় মাদরাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রা.) মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) এবং শিক্ষক আল-আমিন (২৭) ও ইউসুফ আলী (২৬)।

গ্রেফতার দুই মাদরাসাছাত্র পুলিশকে জানিয়েছেন, ইসলামি বক্তা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাত ২টা ৫ মিনিটের সময় যখন মাদরাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েন, তখন তারা দুজনে গোপনে মাদরাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে শাহীন কাউন্সিলরের বাসার সামনে দিয়ে কানাবিল মোড় পার হন। এরপর কমলাপুর হয়ে মজমপুর রেললাইন ধরে ফজলুল উলুম মাদরাসার পাশ দিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে ভাস্কর্যের কাছে আসেন। তারপর ভাস্কর্য নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বাঁশের মই দিয়ে উপরে উঠে নাহিদুল ইসলামের ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে আবু বকর মিঠুন ও সবুজ ইসলাম দুজন মিলে রাত ২টা ৫ মিনিট থেকে রাত ২টা ১৩ মিনিট পর্যন্তু নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটির বিভিন্ন জায়গায় হাতুড়ি দিয়ে জোরে আঘাত করেন। ভাস্কর্যটির ক্ষতিসাধন করে পুনরায় হেঁটে মাদরাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে মাদরাসার শিক্ষক আল-আমিন ও ইউসুফ আলীকে তারা ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিষয়টি জানালে দুজনই তাদের মাদরাসা থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতে বলেন। পরে আসামিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওই দুই শিক্ষককে মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার এ ঘটনায় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আরো সংবাদ