স্টাফ রিপোর্টার।। বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসেল হত্য মামলাটি ডিবি পুলিশে হস্তানন্তর হয়েছে। আর মামলা হাতে পেয়েই হত্যাকারীকের আটকে তৎপর হয়েছে ডিবি পুলিশ। সম্প্রতি কোতয়ালি থানা থেকে মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবির পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।
রাসেল খুনের পরিকল্পনাকারী ও হুকুমদাতা শহিদুজ্জামান শহিদ মেম্বরসহ অন্য আসামি আটক না হওয়া এবং তদন্ত কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী হওয়া এই মামলা ডিবি পুলিশের স্থানন্তরের মূল কারণে বলে জানাগেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর শহীদুজ্জামান শহীদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, খুনখারাবি ও মাদকের রমরমা ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধ অপকর্ম করে আসছিল। একই গ্রামের ছালেক মৃধার ছেলে বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসেল ওই সন্ত্রাসীদের সকল অপকর্মে বাঁধা দেয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়। গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের শ্মশানপাড়ার রবিউল ইসলাম বাবুর মুদি দোকানের সামনে রাসেলসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী বর্তমানে মহামারি করোনায় অসহায়দের জন্য ত্রাণ দেয়ার তালিকা করছিলেন।
এসময় শহীদুজ্জামান শহীদের পোষ্য সন্ত্রাসী সামিরুলসহ কয়েকজন বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়ে সেখানে আসে। দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোয় রাস্তার ধুলো উড়ে রাসেলদের গায়ে লাগে। এসময় তাদের আস্তে মোটরসাইকেল চালানোর কথা বললে রাসেলকে তারা খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাতে পিচ্চি বাবু, শহিদ, সোহাগ, সোহেল, সাগর, সামিরুল, এনামুল, হাসিব, শান্ত, আজাদ, আশিক, ওমর আলী, রেজাউল, রমজান, শামীম, আনিচ, জনি, আলমগীর ও মনিরুলসহ আরো কয়েকজনে ধারালো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাড়ির সামনে থেকে রাসেলকে জোর করে ধরে নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এসময় রাসেলের বড় ভাই আলামিন ঠেকাতে এলে তাকেও কুপিয়ে আহত করে। পরে তাদের চিৎকারে আশাপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ওই সন্ত্রাসীরা চলে যায়। কিন্তু আহত রাসেল ও আলামিনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর রাসেলকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতালের ডাক্তার। আর আলামিনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।
পরদিন ১৬ এপ্রিল রাতে নিহতের পিতা বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের ছালেক মৃধা বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।
ওই রাতেই পুলিশ এই মামলার আসামি সদর উপজেলার চাদপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ওমর আলী, বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মিয়ারাজ মন্ডলের ছেলে ইমদাদুল হক এমএ, মৃত সলেমান মন্ডলের ছেলে রিজাউল ইসলাম ও সাগরকে আটক করে। এর মধ্যে সাগর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে। এরপর আবার শাহিন আলম নামে আরেকজনকে পুলিশ আটক করে। সর্বশেষে পুলিশ আটক করে এই হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত পিচ্চি বাবুকে। পিচ্চি বাবু ও হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে।
কিন্তু এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারি এবং হুকুমদাতা হিসাবে এজাহারে উল্লেখিত শহীদুজ্জামান শহীদ মেম্বর, শামিম, মতিয়ার রহমান, খায়রুল ইসলাম, হাসিব, সবুজ হোসেন, বালিয়া ভেকুটিয়া শ্মশানপাড়ার সোহাগ, ও সোহেল, জনি, সেলিম, আমির হোসেন, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শান্ত, রমজান আলী, আজাদ, আশিক, পাকদিয়া গ্রামের আলমগীর হোসেন এবং বড় ভেকুটিয়া গ্রামের এনামুল এখনো পলাতক রয়েছে।
সম্প্রতি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আহসান উল্লাহ চৌধুরী বেনাপোলে বদলী হয়েছেন। রাসেল হত্যার পরিকল্পনাকারি শহিদ মেম্বরকে আটক করতে পারেননি ওই তদন্ত কর্মকর্তা। ফলে মামলাটি দ্রুত তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশে স্থানন্তর হয়।