পাখিডাকা, ছায়াঘেরা, মায়াভরা, সবুজ পত্র-পল্লভে সুশোভিত, সবুজ-শ্যামলের লীলাভূমি আবহমান বাংলার গ্রামীণ জনপদ। আমাদের শেকড়ের সে উৎসমূলে বসবাস করে নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের সহজ-সরল প্রশস্ত হৃদয়ের সাদামনের মানুষগুলো। তাঁরা দৈনন্দিন জীবনে সদা ব্যস্ত জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি-কালচার, উৎসব-পার্বণসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডে। সোনার বাংলায় আবহমান কাল ধরে চর্চিত হয়ে আসছে বিভিন্ন আচার, রীতি-রেওয়াজ। সেসব ঐতিহ্যবাহী চিরচেনা কৃষ্টি-কালচারগুলোর অন্যতম হলো অতিথি পরায়ণ। গ্রামীণ সমাজের জিয়াফত-মেজবানি, চেহলাম, আকিকা, মুসলমানি, পংক্তিভোজ, বিয়ে-শাদী, হরিবাসর, পুজা, হালখাতা, বনভোজন, মেলা, উৎসব-পার্বণ ও বিভিন্ন উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানাদি হতো। এইসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিরনি, তবারক, খাবার বিতরণ করা হতো কলাপাতা।
এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত লোকজনদেরকে লম্বা লাইন করে মাটিতে আসন পেতে বসিয়ে কলাপাতার মধ্যে খাবার পরিবেশন করার রীতি প্রচলিত ছিল। শুধু তাই নয়, কলাপাতার পাশাপাশি পদ্মপাতা বা শালপাতাতেও খাবার পরিবেশন করা হতো। কিন্তু পদ্মপাতা বা শালপাতা এখন আর মোটেও চোখে পড়েনা। পদ্মপাতা বা শালপাতায় খাবার পরিবেশনের রেওয়াজ কয়েক যুগ আগেই হারিয়ে গেছে। কলাপাতায় খাওয়া শুধু বাঙালি সমাজের রীতিই নয়, দক্ষিণ ভারতেও কলাপাতায় খাওয়ার প্রচলন আছে। এখনও অনেক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় কলাপাতা।
মাগুরায় উৎসব-পার্বণ পাগল বাঙালি তাঁর আচার-অনুষ্ঠানাদিতে বাড়ির আঙিনা, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, মন্দির বা খোলা কোন প্রাঙ্গণে আমন্ত্রিত লোকজনদের কলাপাতায় খাবার পরিবেশন ছিলো কৃষিজীবী সমাজের চিরায়ত ঐতিহ্য। কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক, মেলামাইন, কাঁচ ও স্টিলের থালা-গ্লাসে পানি ও খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। তবে এ ব্যবস্থাও এখন পুরনো হয়ে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন চলছে ওয়ানটাইম গ্লাস-প্লেটে খাবার পরিবেশন।