আজ - শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ১২:৫৫

মানুষ হত্যার বিচার হবে না, কালো আইন পাস করেছিল বিএনপি- এস এম কামাল

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেছেন, বিএনপি আজ বড় বড় কথা বলেন। বিএনপির আমলেই মানুষ হত্যার বিচার হবে না, কেউ আদালতে যেতে পারবেন না,এই কালো আইন পাস করেছিল সংসদে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে নিউ পল্টন লাইন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মো: আখতার হোসেন , লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জামাল, ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনসহ অনেকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএম কামাল বলেন, একটি স্বাধীণ ভ’খন্ডের জন্য স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষুধিরাম, সুর্যসেন, হাজী শরিয়তউল্লাহ, নেতাজী সুভাস বোস, সোহরাওয়ার্দী, শেরে-ই বাংলা ফজলুল, প্রীতিলতারা জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু  সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বাঙালির হিন্দু-মুসলমানদের সেই আরাধ্য সন্তান, টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু থেকে যিনি জাতির পিতা হয়েছিলেন; এই বাংলার জনপদেও মানুষেরাই তাকে শেখ মুজিবকে থেকে বঙ্গবন্ধু; বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা বানিয়েছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করলো।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড পৃথিবীর অন্যান্য হত্যাকান্ডের সাথে তুলনা চলে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের তার ব্যতিক্রমধর্মী। বাংলাদেশে একটি পরিবারের আটারো জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যে পাকিস্তানের হাত থেকে বাঙালিকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি দিয়েছিলেন। যে পাকিস্তানের হাত থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ১৪টি বছর পাকিস্তানের কারাগারে নির্যাতিত হয়েছিল। ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছিলেন। সেই পাকিস্তানকে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধু যখন তার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছিলেন, সেই পরাজিত শক্তি আর তাদের আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী  মোড়লশক্তি; তাদের ষড়যন্ত্রে আর বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট খন্দকার মোশতাক আর জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্রে করে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে গিয়ে গিয়েছিল।
সেই অন্ধকার যুগে যখন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সেনা অফিসার জোয়ানদের হত্যা করা হয়েছিল। যখন আওয়ামী লীগের সাড়ে চার লাখ নেতাকর্মীকে গুম খুন হত্যা গ্রেফতার করেছিল। যখন বিমানবাহিনীর ৫৭১জন অফিসারকে হত্যা করেছিল রাতের অন্ধকারে রাত দশটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ দিয়ে জিয়াউর রহমান দেশ পরিচালনা করত। সেই অন্ধকার যুগে আল্লাহর আর্শীবাদ স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর দুই তনয়া শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বেঁচে ছিলেন। শেখ হাসিনা তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরে জিয়া-এরশাদ খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনেন।
তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পাকিস্তানের ধারায় ফিরে গিয়েছিল। যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ দারিদ্র্যের বাংলাদেশ ছিল; যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছিল, সেই বাংলাদেশে; ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আপনাদের দোয়া-ভালবাসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশকে মুক্তিযুদ্ধেও ধারায় ফিরে এনেছিল, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে এনেছিল। বাংলাদেশে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিশ্বের দরবারে খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে খাদ্য উদ্বর্ত্যরে দেশে পরিণত করেছিল।
কিন্তু ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র করে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আমরা কি দেখলাম প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে হাওয়া ভবন তৈরি করে, সারাদেশে সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি করলো। চাঁদাবাজি, গুম খুন সন্ত্রাসের কারণে বিএনপি যখন দেশ পরিচালনা যখন ব্যর্থ হল। অস্বাভাবিকভাবে দেশ পরিচালনা করল। ক্লিন হার্ট অপারেশনের নামে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের ১২৮জন লোককে হত্যা করল।
‘‘বিএনপি আজ বড় বড় কথা বলেন। বিএনপির আমলেই দুইটি আইন হয়েছে সংসদে। মানুষ হত্যার বিচার হবে না, কেউ আদালতে যেতে পারবেন না। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ১৯৭৯’র এর পার্লামেন্টে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না, শিশু হত্যার বিচার হবে না, নারী হত্যার বিচার হবে না, এই আইন বিএনপি পাস করেছিল। আর ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে মানুষ হত্যার বিচার হবে না, কেউ তার সন্তানকে হারালে, কেউ খুন করলে আদালতে যেতে পারবেন এই কালো আইন পাস করেছিল বিএনপি। এই আইন পাস করার পর বিএনপির সন্ত্রাস, অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের নেত্রী কথা বললেন, তখন গর্জে উঠলেন বাংলার মানুষ। বাংলার মানুষ যখন তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হলো, যখন লড়াই সংগ্রাম শুরু করলেন, তখন এই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়।
আমাদের নেত্রী আজকে তিনি দক্ষতার সাথে সাহসিকতার সাথে সকল ক্রাইসিসকে মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ব নেতৃত্ব যখন শেখ হাসিনার প্রশংসা করছেন, সেই নেত্রীকে হত্যা করার জন্য ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আগস্ট মাস, ভাই হারা বোনের আর্তনাদ, স্বামী হারা স্ত্রীর আর্তনাদ, সন্তানহারা পিতার আর্তনাদ। সেই আগস্ট মাসে আপনারা দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করছেন।
বিএনপি বলে তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলায় জড়িত না। আমি শুধু একটি উদাহরণ দিতে চাই; মেজর শামস (সামসুদ্দিন) সেদিন ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে তৎকালীণ সরকার তাকে পাঠিয়েছিল গুলিস্তানে গ্রেনেড আছে কি না দেখতে? ওইদিন রাতে দুইটি গ্রেনেড পেয়েছিলেন। সেই গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়েছিল, আলামত হিসাবে রাখেননি। পরেরদিন আরেকটা গ্রেনেড পায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে। আরেকটি গ্রেনেড পায় জেলখানার ভিতরে। বিএনপির সহযোগিতা না থাকলে বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে এই গ্রেনেড কেন জেলখানায় গেল? কারা নিল?
তিনি বিএএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ২৫ বার দাঁড়িয়েছিলেন পার্লামেন্টে কথা বলার জন্য, সেদিন কথা বলতে দেয়া হয়নি। বেগম জিয়া খালেদা জিয়া বিদ্রুপ করেছিলেন। অর্থ্যাৎ খালেদা জিয়া তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য সকল ধরনের অপকর্ম করেছিলেন। তারেক জিয়া এই হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। কেন হত্যা করতে চেয়েছিল? ওরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আর আওয়ামী লীগ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, আওয়ামী লীগ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য পিতার সন্তান হিসাবে বাবার মতোই ২১ বার মৃত্যুও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষের দাবির সাথে কখনো আপোষ করেননি। ক্ষমতা অর্থের কাছে মাথা নত করেননি। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
দলীয় নেতকার্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এসএম কামাল বলেন, আসুন আমরা শপথ নেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সমৃদ্ধির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্যে আমরা নিজেদের গড়ে তুলে কাজ করি।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত