আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৯:০১

মৃত্যুর পর যার গর্বে গর্বিত গোটা খোকশা উপজেলা! কে এই বীর মাহবুব ?

নাঈম সাব্বির ও মুনতাসির মামুন (মাহবুবের বাড়ি থেকে ফিরে) ঃ ১৪ বছর আগে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মাহবুবুর রশিদ। এলাকার মানুষ তাকে মাসুদ নামে চেনেন। মাহবুব রশিদ ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী।

নিহত মাহবুবের বাবা মা।

অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন হামলার সময়। শেখ হাসিনাকে রক্ষায় নিজের জীবন বাজি রাখেন। পরিবারের সে সময়কার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মাহবুব। ছেলেকে হারিয়ে তখন অনেকটা অন্ধকারে পড়েন বৃদ্ধ পিতা হারুন-অর রশীদ আর মা হাসিনা বেগম।

তবে মাহবুবকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই পিতা হারুণ-অর-রশিদ ও আর মা হাসিনা বেগমের। তবে বয়সের ভারে দু’জনই এখন নুয়ে পড়েছেন। অসুস্থ থাকেন প্রায়ই। তারপরও আগষ্ট মাস আসলে ছেলের কথা ভাবেন সব সময়। সে সময়কার কথা ভেবে রোমাঞ্চিত হন এই মা-বাবা।

মাহবুবের পিতা হারুন-অর-রশিদ বলেন,‘ মাহবুব শেখ হাসিনার দেহরক্ষী হিসেবে চাকুরি করতেন এটা আমাদের পরিবারের জন্য গর্বের বিষয় ছিল। শেখ পরিবারের প্রতি আমাদের সবার আলাদা দুর্বলতা ছিল। ছেলে শেখ হাসিনার জন্য জীব দিয়েছেন তাতে আমাদের কোন আক্ষেপ নেই, আমরা এ জন্য গর্বিত। মাহবুব জীবন দিয়ে সবার মাঝে অমর হয়ে আছেন।

তিনি আরো জানান, ছোটবেলা থেকেই মাহবুব ছিলো খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কোনদিন কারো সাথে কোন ধরনের কথা-কাটাকাটিও হয়নি। এলাকার সকলের প্রিয় পাত্র ছিলো সে। অভাব আর অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলো সে। অনেক কষ্ট করেছে সে জীবনে। পরিবারের সবার জন্য সে অনেক কিছু করতে চেয়েছিল। কষ্টের মাঝেও সে সবার দেখাশোনা করতেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতেন। ঢাকায় থেকে সার্বক্ষনিক আমাদের খোঁজ রাখতেন। মাহবুব আমার সন্তান ছিলো এ কথা ভাবতে আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়। আমি এমন এক সন্তানের পিতা যে তার নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে।

চাকুরিকালিন সময়ের কথা মনে করে এই বৃদ্ধ পিতা বলেন, মাহবুবের আয়ের সংসার চলতো। মাহবুব যখন মারা যান তখন তার সন্তান ছোট ছিল। এছাড়াও তার অন্য ভাই-বোনেরাও তখন ছোট ছোট। পরিবারের সবার খোঁজ রাখতেন মাহবুব। তার মৃত্যুর পর আমরা কিছুটা ভেঙ্গে পড়ি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাহবুবের স্ত্রী, দুই ছেলে ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সবার খোঁজ খবর রাখেন। শুধু তিনি নয় স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ প্রশাসনের লোকজনও সহযোগিতা করেন।

মাহবুবের পিতার আক্ষেপ অন্যখানে। ছেলেকে যারা হত্যা করেছেন তাদের কঠিন বিচার দেখে যেতে চান।তিনি বলেন,‘ মাহবুবসহ যারা সেই দিন নিহত হয়েছেন তাদের হত্যাকারিদের কঠিন সাজা হওয়া দরকার। ছেলের ঘাতকদের ফাঁসি দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম।

শুধু মাহবুরের পরিবারই নয় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের সবাই গর্বিত। মাহবুবকে নিয়ে তারা গর্ব করেন।

এ এলাকার সন্তান অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন দুলাল বলেন,‘ মাহবুব জীবিত থাকতে শুধু পরিবারেরই নয়, এলাকার সবার খোঁজ খবর রাখতেন। তিনি এলাকার মানুষের মাঝে চির স্মরনীয় হয়ে থাকবেন।

মাহবুবের পরিবারের সদস্যরা বলেন, মাহবুবের বড় ছেলে প্রকৌশল ও ছোট ছেলে চিকিৎসা বিদ্যায় পড়ালেখা করছে। দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। ছেলেরা খুবই মেধাবী। তারা লেখাপড়া শিখে ভাল চাকুরি পেলে মাহবুবের স্বপ্ন পুরন হবে। মাহবুব চাইতেন তারা ছেলেরাও লেখাপড়া করে ভাল চাকুরি করবে। দেশের জন্য কাজ করবে।

আরো সংবাদ