আজ - শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - দুপুর ২:২১

মৃত্যু আলমগীরের জনপ্রিয়তা গগণচুম্বি করেছে : মুড়লি তে শহীদ আলমগীরের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত।

মৃত্যু সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেনের জনপ্রিয়তাকে গগণচুম্বি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম।আজ বুধবার যশোর শহরতলীর  মুড়লী মোড়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আলমগীর হোসেনের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন শাহারুল ইসলাম।

এ সময় তিনি প্রয়াত বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেতা আলী রেজা রাজুর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, তুমি মরে গেলেও তোমার লিডারশিপ অর্জন করতে পারো। আলমগীর তাঁর উদাহরণ । এই রামনগর ইউনিয়নে আলমগীর বেঁচে থাকা কালে তিনবার চেয়ারম্যান ভোটে পরাজিত হয়েছেন কিন্তু তাঁর মৃত্যুরপর তাঁর সহধর্মীনি নাজনীন নাহার কে আপনার আপনাদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।অর্থাৎ আলমগীরের লিডারশিপ আলমগীরের জনপ্রিয়তা মৃত্যুরপর গগণচুম্বি হয়েছে।এসময় শাহারুল ইসলামের সাথে কাঁটানো আলমগীরের একান্ত সময়ের স্মৃতিচারণ ও তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করে আলমগীরে হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরোও বলেন সামনের দিনগুলি আরোও চ্যালেঞ্জিং। যশোর জেলা আ’লীগ সম্পাদক শাহিন চাকলাদারের নির্দেশনায় অতীতের মত ভবিষ্যতেও আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা মরলে শহীদ বাঁচলে গাজি এই নীতিতে রাজনীতি করি। মৃত্যু ভয় আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবেনা।

আলোচনা সভায় জেলা তরুণ লীগের যুগ্ম সাধারন সস্পাদক ও রামনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী মাহমুদ হাসান লাইফের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরোও বক্তব্য রাখেন রামনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মসলেম উদ্দিন,৫ নং ওয়ার্ড  আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুল হাসান কাবুল, ৫ নং ওয়ার্ড  আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রশীদ, ২ নং ওয়ার্ড  আওয়ামীলীগের সভাপতি খন্দকার আলম, ৪ নং ওয়ার্ড  আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ আলতাব হোসেন প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তারা আলমগীর হোসেনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তি জীবনের স্মৃতি চারন করে শহীদ আলমগীর হোসেনের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।আলোচনা সভায় প্রায় সহস্রাধীক মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। পরে শহীদ আলমগীর হোসেনের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনজাত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তাবারক বিতরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ২৫ মে বিকেলে যশোর শহরতলীর রাজারহাট চামড়া বাজার এলাকার সরদার ট্রেডার্স নামে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তরা আলমগীর হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা আলমগীর হোসেন কে উদ্ধার করে, যশোর জেনারেল হাসপাতাল পরবর্তীতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ বছরের ১৮ জুন মৃত্যুবরণ তিঁনি।

২০১৪ সালের ২৫ মে রাতে রাজারহাট বাজারে আলমগীরের উপর রামনগর গ্রামের আব্দুল মান্নান সরর্দারের ছেলে এবং রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হাসান, শুকুর আলী মোল্যার ছেলে শাহিন ওরফে পাগলা শাহিন, মৃত মকিম খানের ছেলে মহব্বত আলী, মৃত আসমত আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে বিসমিল্লাহ, হাকিম বক্সের ছেলে অ্যাডভোকেট টিএম ওমর ফারুক, রামনগর পুকুরকুল এলাকার নুর ইসলামের ছেলে সুমন হোসেন ওরফে পাটালি সুমন, কানা মোতাহারের ছেলে মানিক, মোশারফ হোসেনের ছেলে রাকিব, রামনগর ধোপাপাড়ার জাফর খার ছেলে আকাশ, একই এলাকার খাঁ-পাড়ার আব্দুল জলিলের ছেলে নাজমুল ইসলাম, রামনগর সরদার পাড়ার আনারের ছেলে মুরাদ, সাকার ছেলে আহাদ, রফিকুলের ছেলে আফজাল, মৃত জোহর আলীর ছেলে ওমর আলী, কাজীপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে ফসিয়ার রহমান গাজী, মৃত মোহাম্মাদ আলী গাছির তিন ছেলে শফিক ওরফে শফিকুল, তরিকুল ইসলাম ও তফিকুল ইসলাম, শাহদৎ হোসেনের ছেলে সিদ্দিক, মহব্বত আলীর দুই ছেলে মুরাদ হোসেন ও ফরহাদ হোসেন, আবু বক্কারের ছেলে মহিদুল ইসলাম, আব্দুল জলিল ও তার দুই ছেলে আলম এবং আলিম, মৃত আরশাদ আলীর ছেলে আব্দুল জব্বার খান, শুকুর মোল্যার দুই ছেলে মফিজ ও জিয়াউর রহমান, মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে সুজন হাসান, শেখ আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে শেখ রাসেল ইসলাম, আদাড়ে সরর্দারের দুই ছেলে ইয়াছিন আরাফাত ও শরফত হোসেন, মৃত আব্বাস আলীর ছেলে আব্দুল গফুর, আতিয়ার সরর্দারের ছেলে আকরামুল ইসলাম, মৃত আনু সরর্দারের ছেলে শওকত হোসেন, আকমল সরর্দারের ছেলে শরিফুল ইসলাম মিন্টু, শওকত হোসেন বেচার ছেলে মিলন হোসেন, মুড়োলি খাপাড়ার আনছার আলীর ছেলে বিল্লাল হোসেন এবং ফারুক খানের ছেলে মোশারেফ হোসেন হামলা করে। তারা আলমগীরকে গুলি করে ও বোমা মেরে মারাত্মক আহত করে। এসময় প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শহীদ আলমগীর হোসেন (ফাইল ফটো)

এদিকে আলমগীর হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি পাগলা শাহিনের লাশ গত বছর মাগুরা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত ফসিয়ার রহমান মুড়লীর পাশেই কাজীপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। মহব্বত কখনো বাড়ি, আবার কখনো আশপাশের আত্মীয় বাড়িতে থাকেন। অপর অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিসমিল্লাহ ও মহিদুল ইসলাম কেশবপুরে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন।


এসব খুনিরা সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। ফলে থেমে আছে মামলার বিচার কার্যক্রম। একের পর এক দিন ধার্য হলেও মামলার চার্জ গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না।


নিহত আলমগীর হোসেনের স্ত্রী রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজনীন নাহার আলমগীর জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারার কারণে আটকে আছে মামলার চার্জ গঠন। হত্যাকাণ্ডের পরের বছরই তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আর আইনি প্রক্রিয়া এগোয়নি। খুনিরা এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও গ্রেপ্তার হচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

খানজাহান আলী 24/7 নিউজ/ মুনতাসির মামুন।

আরো সংবাদ