ক্যাম্পাস প্রতিবেদক : বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সকল ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় শ্রেণি প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করতে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সভায় শিক্ষকেরা ভয়কে জয় করে শিক্ষার্থীদেরকে স্বাধীনভাবে চলার জন্য নির্দেশ দেন।
আজ বুধবার দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের গ্যালারিতে বিবিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে যবিপ্রবি প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় শ্রেণি প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা বিপদে-আপদে সব সময় শিক্ষার্থীদেও পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সভায় একজন শ্রেণি প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই মরে গেছি, যখন আমার শিক্ষকের উপর হামলায় হয়েছিল আর আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আরেকবার মরে ছিলাম যখন আমার শিক্ষক যে মাইকে কথা বলছিল, সেই মাইকে কিছু কুলাঙ্গার ছাত্র লাথি মেরেছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি অথচ একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের হুমকিতে ভয়ে মরে যাচ্ছি। বন্ধুদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে মরার আগে মরবে না। আমরা এক থাকলে কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না।’
আরেকজন শ্রেণি প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যারা অবস্থান করছে তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা যশোর শহরের বিভিন্ন মেসে রয়েছে তাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নিতে বলা হচ্ছে। এমনভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে যে, আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যবিপ্রবি প্রশাসন, যশোর জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।
ভয়ভীতি থেকে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা মুক্ত হচ্ছে না অভিযোগ করে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত একটি বিভাগের একজন শ্রেণি প্রতিনিধি বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরকার রাহুর গ্রাসে ছিলাম। এখন শহরের রাহু আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা কোথায় যাবো? কখনো কি ভয়ভীতি থেকে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা মুক্ত হবে না?
মতবিনিময় সভায় প্রায় ৫০ জনের অধিক শ্রেণি প্রতিনিধি যশোর শহরের রাজনীতি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে তাদের যুক্তি ও মতামত তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: আনিছুর রহমান বলেন, আমরা সবাই সাহসী। কিন্তু এতোদিন সাহস দেখানোর সাহস পায়নি। কারণ আমাদের পেছনে কোনো সহাসী মানুষ ছিলেন না। বর্তমান উপাচার্য একজন সাহসী মানুষ। সুতরাং আমরা এখন সাহসী। তাই দুর্বৃত্তদের এখন না বলা শিখতে হবে। তাহলে আমাদের ভয় কেটে যাবে। ভয়কে জয় করতে না পারলে সামনের দিকে এগোনো যাবে না।
যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, যারা অপরাধী তারা শুধু ভয়ই দিতে পারবে। কোনো কিছুই করতে পারবে না। একজন শিক্ষার্থীকে কিছু করে কেউ পার পেয়ে যাবে এমনটা ভাবা যাবে না। তোমরা যদি সাহসী হও, ঐক্যবদ্ধ থাকো তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাক ড. শেখ মিজানুর রহমান বলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই প্রশাসন সব সময় তোমাদের পাশে থাকবে। এ জন্য তোমাদেরও সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। আশা করি, সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে পারবো।
সভায় আরও বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সেলিনা আক্তার, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ প্রকৌশলী ড. মো: আমজাদ হোসেন প্রমুখ। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: আব্দুল মজিদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, দপ্তর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।