থানায় দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় চার শিশুকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় ব্যাখ্যা দিতে বরিশালের বাকেরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তাকে আগামী ১১ অক্টোবর সশরীরে হাইকোর্টে ব্যাখ্যা দিতে হাজির হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যশোরের জেলা প্রশাসককে যশোর পুলেরহাটে অবস্থিত কিশোর (বর্তমানে শিশু) উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ওই চার শিশুকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে আজ রাতের মধ্যে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ওই চার শিশুর অভিভাবকসহ আগামী ১১ অক্টোবর হাইকোর্টে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাতে আদালত বসিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
ধর্ষণের মামলায় চার শিশুকে গ্রেফতার করে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো নিয়ে একটি টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদ আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাত নয়টায় বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারককে ওই চার শিশুর জামিন নিষ্পত্তির বিষয়েও আদেশ দিয়েছেন।
বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে ভিকটিম শিশুর ধর্ষণ সংক্রান্ত মেডিকেল রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতের মধ্যে শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছে পৌঁছে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানকে অবগত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, হাইকোর্টের সব নির্দেশনা বরিশালের শিশু আদালতের বিচারক, জেলা প্রশাসক, পরিচালক, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাকেরগঞ্জের ওসিকে টেলিফোনে অবগত করা হয়েছে।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশ অবগত হওয়ার পর বরিশালের শিশু আদালতের বিচারক ওই চার শিশুর জামিন মঞ্জুর করেছেন বলেও জানিয়েছেন সাইফুর রহমান।
বাকেরগঞ্জে গত ৪ অক্টোবর ছয় বছরের এক প্রতিবেশী কন্যাশিশুর সঙ্গে চার ছেলে শিশু বাগানে বসে খেলছিল। এরপর মেয়ে শিশুটিকে তার পরিবার অসুস্থ অবস্থায় বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে যায়। এরপর সেই চার ছেলে শিশুকে গত ৬ অক্টোবর আসামি করে বাকেরগঞ্জ থানায় কন্যাশিশুর বাবা ধর্ষণের মামলা করেন। ওই মামলায় চার শিশুকে গ্রেফতার করে গত ৭ অক্টোবর আদালতে হাজির করা হলে তাদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন বরিশালের বাকেরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ।
শিশুদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, তাদের শিশুরা ধর্ষক নয়। শত্রুতার জের ধরে তাদের শিশু সন্তানদের ফাঁসানো হয়েছে। এরপর এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট এই আদেশ দিলেন।