আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - বিকাল ৩:৪০

যশোরের বাঁধাকপি গেল সিঙ্গাপুরে, প্রথম চালানে রপ্তানি হলো ২০ হাজার কেজি

যশোর সদরের বারীনগর পাইকারি সবজির মোকামে এখন প্রতিটি বাঁধাকপি পাঁচ থেকে সাত টাকা বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় বাঁধাকপির দাম কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের ক্ষেত থেকে সরাসরি বাঁধাকপি কিনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সিঙ্গাপুরের বাজারে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মাঠ থেকে প্রথম চালানে ২০ হাজার কেজি বাঁধাকপি রপ্তানি হয়েছে। এতে কৃষকের চোখে-মুখে এখন হাসির ঝিলিক।

কৃষিবিভাগ ও সফল প্রকল্প সূত্র মতে, সিটি ইমপেক্স নামে ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের কাছ থেকে এই বাঁধাকপি কিনে প্রক্রিয়াজাত করে জাহাজে সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র টেকসই কৃষির উন্নয়নে ‘সফল’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের সাাথে সংযোগ স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চার মাসে যশোর থেকে ৭৪ হাজার ৩১৪ কেজি নিরাপদ সবজি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, পটল, পেঁপে, চিচিংগা, ঝিঙ্গে, বরবটি, লাউ, কলা, দেশি শিম ও গোল বেগুন।

যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভৈরব নদের তীরে তাবু টাঙিয়ে অস্থায়ী সবজি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় যানবাহনে করে গ্রামের মাঠ থেকে বাঁধাকপি কেটে ওই কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। শ্রমিকরা তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিউজপ্রিন্টের সাদা কাগজে একটা করে বাঁধাকপি মুড়িয়ে নাইলনের জালের ব্যাগে ভরে কাভার্ডভ্যানের ভিতরে সাজিয়ে রাখছে। চলতি মৌসুমে বিদেশে বাঁধাকপি রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় মঙ্গলবার। রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং উপপরিচালক (রপ্তানি) সামছুল আলম। এছাড়া কেন্দ্রে কৃষিবিভাগের কর্মকর্তাসহ নানা পর্যায়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

রপ্তানিকারক শরিফুর রহমান বলেন, যশোর থেকে কাভার্ডভ্যানে করে বাঁধাকপি চট্টগ্রাম নৌ বন্দরে নেওয়া হবে। পরে বিশেষায়িত কন্টিনারে ভরে জাহাজে করে তা সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে চার থেকে পাঁচদিন সময় লেগে যাবে। তিনি আরো বলেন, এর আগে শুকনা খাদ্য ও আলুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছি। কিন্তু বাঁধাকপি এই প্রথমবারের মত রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথম চালানে ২০ হাজার কেজি বাঁধাকপি পাঠানো হচ্ছে। পণ্যের গুণগতমান ঠিক থাকলে ও ক্রেতাদের মনরক্ষা করতে পারলে সপ্তাহে অন্তত দুইটি চালান রপ্তানি করা যাবে। এতে কৃষকরাও লাভবান হবেন।

শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম বলেন, ৩৩ শতকের সাত বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছি। প্রথম দিনে রপ্তানির জন্যে তিন হাজার বাঁধাকপি বিক্রি করেছি। আট থেকে নয় টাকা করে প্রতিটা কপির দাম পাওয়া গেছে। স্থানীয় সবজির বাজারে এখন মানভেদে পাঁচ থেকে সাত টাকা দরে প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি রপ্তানি হওয়াতে আমরা লাভবান হচ্ছি। এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে।

কৃষক রেজাউল করিম বলেন, এই বাঁধকপির চাষ পদ্ধতি একটু ভিন্ন। বাঁধাকপির ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করা যায় না। কেচো সার ও জৈব বালাইনাশক দিয়ে চাষ করতে হয়। এজন্য এই সবজি নিরাপদ। আমরা আগে থেকে কৃষি বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে কৃষিবিভাগ আমাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে। এবার ৪৮ হাজার বাঁধাকপি রোপণ করেছি। প্রথম দিনে ৫ হাজার বিক্রি করেছি। দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। লাভবান হচ্ছি।

সফল প্রকল্পের পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষকের মাঠের সাথে রপ্তানিকারকের সরাসরি সংযোগস্থাপন হওয়ায় মধ্যভোগীদের দৌরাত্ম্য কমেছে। বাজারে পণ্য তোলার পরে হাটমালিককে খাজনা দিতে হতো; তাও এখন দেওয়া লাগে না। এতে সরাসরি কৃষক ও রপ্তানিকারক লাভবান হচ্ছেন। টেকসই এই কার্যক্রমে কৃষিবিভাগ সরাসরি তত্ত্বাবধান করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোর জেলায় মোট ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ রয়েছে। এরমধ্যে বাঁধাকপি রয়েছে ৭৫ হেক্টর। যশোর জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বছরে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর সবজি উদ্বৃত্ত থাকে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এমনকি বিদেশেও এখন রপ্তানি হচ্ছে।

আরো সংবাদ