যশোরের বাহাদুরপুরে যুবলীগকর্মী মোহাম্মদ আলী হোসেন (৩০) হত্যা মিশনের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী রবিউল ইসলাম ওরফে নবাবকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ। ২২ জুন দিবাগত ভোর রাত সাড়ে ৩ টায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুদহাটা থেকে তাকে অস্ত্র-গুলিসহ আটক করা হয়।
সন্ত্রাসী নবাব আটক ও আলী হত্যা মামলা নিয়ে রোববার দুপুরে ব্রিফিং করেছে যশোর ডিবি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নবাব জানিয়েছে বাবা মাকে গালিগালাজ করার কারণে আলী হোসেনকে গুলি করে নবাব।
গত ৬ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাহাদুরপুর তেঁতুলতলা মোড়ে ওই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী হোসেনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আলী হোসেন সদ্য সমাপ্ত যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ছিলেন। ওইদিন রাতে মোটরসাইকেল প্রতীকের বিজয় উপলক্ষে উপশহর ই-ব্লকে প্রীতিভোজের আয়োজন ছিল। সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ি ফেরার পথে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা আলীর মাথা ও পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আলী হোসেন।
হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার নয়ন ও সোহানের বক্তব্যে ঘটনার রাতেই পুলিশ জানতে পারে এ হত্যাকান্ডে কিসমত নওয়াপাড়ার সন্ত্রাসী নবাব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জড়িত। এরপর এলাকা থেকে জড়িতদের ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হয়ে ৮ জুন রাতে নিহত আলী হোসেন মা মঞ্জুয়ারা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। আর পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে ১০ জুন রাতে হত্যা মামলা রেকর্ড করে। মামলায় নবাবকে (৫৫) প্রধান আসামি করে ছয় জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরো ৫/৭ জনকে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হচ্ছে, প্রধান আসামি রবিউল ইসলাম নবাবের ছোট ভাই সিরাজ, পাঁচবাড়িয়া গ্রামের একরামুল, বাহাদুরপুর গ্রামের টোকন, চাঁচড়া ভাতুড়িয়া গ্রামের ইসরাজুল ও কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের এনামুল শেখ। এক পর্যায়ে মামলাটি তদন্তে মাঠ নামে ডিবি পুলিশ। তারা হত্যা মিশন সদস্য মামলার আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করার কাজ শুরু করে ১১ জুন থেকে। মামলাটি তদন্তকালে গোপন তথ্যে প্রথমে প্রধান আসামি নবাবের সহযোগী পলাতক আসামি দিপক কুমার অধিকারী সাগরকে শনাক্ত করে। আর ১২ জুন বিকেলে পালবাড়ি মাছবাজার মিরাজ মিলিটারির বাসায় অভিযান চালানো হয়। এখানে সাগরকে পাওয়া না গেলেও হত্যা মিশনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও সন্ত্রাসী শুটার সাগরের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এক পর্যায়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২২ জুন দিবাগত রাতে আশাশুনি থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলিসহ আটক করা হয় নবাবকে। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় হত্যামিশনে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল, হত্যাকারীর পরিহিত বস্ত্র, হত্যা মিশনে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও দিপক ওরফে সাগরের হায়েচ মাইক্রোবাস।
রোববার দুপুরে ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে, এসআই মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খালিদ অভিযান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরায়। জেলার বুধহাটা উপজেলা থেকে ভোররাতে তাকে আটক করা হয়।
আটক নবাব যশোরের কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের মফজেল বিশ্বাসের ছেলে। এছাড়া, সে জেলা যুবদলের বন ও পরিবশে বিষয়ক কমিটির সভাপতি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এলাকায় মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি নিয়ে আলী হোসেনের সাথে বিরোধ ছিল নবাবের। আর এসব নিয়ে নবাব ও তার বাবা মফজেল বিশ্বাস মা মোমেনা বেগমকে গালিগালাজ করে আলী হোসেন। এ নিয়ে নবাব ক্ষুব্ধ হয়ে দ্পিক ওরফে সাগরসহ সহযোগিদের নিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে যুবলীগ কর্মী আলী হোসেনকে।