সংগৃহিত সংবাদ: যশোরে ডিপ্লোমা ও ডেন্টিস্ট কোর্স করে অনেকে চিকিৎসক সেজে রোগীর দন্ত চিকিৎসা দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার প্রকৃত ডেন্টিস্ট চিকিৎসক (চিকিৎসকের সহকারী) পরিচয়ে কেউ কেউ ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে নামের আগে ডাক্তার লিখেছেন। এমনকি রোগীর চিকিৎসাসেবার পাশাপশি অস্ত্রোপচার করছেন। অথচ সাধারণ মানুষ না বুঝেই এই প্রতারকদের কাছে ছুটছেন। ভুয়া চিকিৎসকদের অপচিকিৎসায় প্রকৃত ডেন্টাল সার্জনদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ডিপ্লোমা ও ডেন্টিস্ট চিকিৎসক এক নয়।
ডেন্টাল সার্জনস ফোরাম যশোরের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সোচ্চার হলেই ভুয়া ডিগ্রিধারীদের দমন করা সম্ভব। এ সংগঠনের যশোরের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, জেলায় মোট ৪৯ জন ডেন্টাল সার্জন রয়েছেন। এই তালিকার বাইরে যশোরে ডেন্টাল সার্জন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর জেলার প্রতিটি উপজেলায় নামধারী দন্ত চিকিৎসকের ছড়াছড়ি। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানে দন্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ভুয়া ডিগ্রির চিকিৎসক। তারা ডিপ্লোমা ও ডেন্টিস্ট কোর্স করেছেন এমন দাবি করে চিকিৎসক সেজে রোগীর দাঁতে ব্যথা, দাঁত তোলা, স্কেলিং, ফিলিং (লাইট কিউরসহ), দাঁত বাঁধানো (পিডি, সিডিসহ), উঁচু ও বাঁকা দাত সমান করা, রুট ক্যানেল জিনজি ভাইটিস, দাঁতের গোড়া হতে রক্ত পড়াসহ নানা রোগের চিকিৎসা প্রদান করছেন। যা রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বেসরকারি একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক কোনে অবস্থিত নিরাময় ডেন্টাল কেয়ার। সেখানে দন্ত চিকিৎসক পরিচয়ে রোগীদের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করছেন আলী আহমেদ নামে একজন। অবশ্য তাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন শামসুজ্জামান সোহাগ নামে একজন ডেন্টাল সার্জন। তাকে ঢাল হিসেবে রেখে আলী আহমেদ চিকিৎসা প্রতারণা করছেন।
রোববার দুপুরে নিরাময় ডেন্টাল কেয়ারে গিয়ে দেখা যায় আলী আহমেদ এক রোগীর অস্ত্রোপচার করছেন। কিন্তু কোন চিকিৎসা সনদ দেখাতে পারেননি তিনি। আলী আহমেদের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের যুবক জসিম উদ্দিন।
ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, আলী আহমেদের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে তার সমস্যা আরো বেড়েছে। জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে এসে তিনি দালালের খপ্পরে পরে সেখানে গিয়েছিলেন।
শহরের চৌরাস্তায় বিশ্বাস ডেন্টাল চলছে সার্জন ছাড়াই। সেখানে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন রাবিন বিশ্বাস। অভিযোগ রয়েছে, রাবিন বিশ্বাস কোন ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নয়। মূলত তিনি একজন ডেন্টিস্ট। কিন্তু চিকিৎসক পরিচয়ে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছেন।
বারান্দীপাড়া ঢাকা রোডে জিল্লুর রহমান নামে একজন চিকিৎসক পরিচয়ে প্রতারণা করছেন। দন্ত চিকিৎসায় তার কোন ডিগ্রি নেই। পালবাড়ি মোড় ও নীলগঞ্জ এলাকায় দুই ভাই আব্দুল কাদের ও হারুন অর রশিদ দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে তাদের কারো ডিগ্রি নেই। তারপরেও তারা প্রকাশ্যে দন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন।
চুড়ামনকাটি বাজারে রাজধানী ডেন্টাল নামে প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন কে এম হাসিবুল ইসলাম। তিনি নামের আগে ডা. ও পরে এলডিডিএস (ঢাকা) ডিগ্রি ব্যবহার করেছেন। বছরের পর বছর কেএম হাসিবুল ইসলাম ডাক্তার পরিচয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন। এলডিডিএস ডিগ্রির সম্পর্কে কে এম হাসিবুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকার মিরপুর থেকে লোকাল ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। তবে পাশ করা প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারেননি তিনি।
হৈবতপুর ইউনিয়নের সাতমাইল-বারীনগর বাজারের শাহবাজপুর রোডে মাত্র পাঁচ গজের ব্যবধানে শাহআলম ওরফে বাবুল বারীনগর ডেন্টাল, আলমগীর কবীর আজাদ ডেন্টাল কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিজেরাই ডাক্তার সেজে বসেছেন। অথচ তারা তিনজনই চিকিৎসকের সহকারী (ডেন্টিস্ট)।
বাঘারপাড়া উপজেলা শহরের চৌরাস্তা মোড়ের মুজিব সড়ক মার্কেটে অবস্থিত মোল্লা ডেন্টাল কেয়ার এন্ড চাঁদসী ক্ষত চিকিৎসালয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে চিকিৎসক পরিচয়ে রয়েছেন ডা. মনিরুল ইসলাম। ব্যবস্থাপত্রে তিনি তার ডিগ্রি উল্লেখ করেছেন ডিডিটি (ঢাকা)। যা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক স্বীকৃত কোন ডিগ্রি না।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, ডেন্টিস্ট কোন ডিগ্রি নয়। তারা চিকিৎসকের সহকারী। বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক স্বীকৃত ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না।
সিভিল সার্জন আরো জানান, ডিপ্লোমা কোর্স করে কেউ চিকিৎসক পরিচয় দিতে পারবেন না। তারা চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কেবলমাত্র এমবিবিএস ও বিডিএস পাশ করলেই তিনি ডাক্তার। জেলায় চিকিৎসক পরিচয়ে প্রতারণার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। জেলার একাধিক ভুয়া দন্ত চিকিৎসকের কর্মকান্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের নজর আছে। ভুয়া ডিগ্রিধারীদের বিরুদ্ধে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।