আজ - শুক্রবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১১:৪১

যশোরে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি পুলিশ সহ জড়িত ৪ জন আটক।

যশোরের ডিবি পুলিশের হাতে রাজারহাটে পুলিশ পরিচয়ে সাড়ে ১৯ ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনায় আরও চারজন আসামি আটক হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন রয়েছেন পুলিশ সদস্য, যিনি সাতক্ষীরার দেবহাটা থানায় কর্মরত। এমনকি তিনি নিজেও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যশোর জেলা পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করেছে। অন্যদিকে, সেই পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ (অ্যাকশন) নিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। এর আগে রোববার রাতে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় যশোরের ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন, কুষ্টিয়ার মীরপুর উপজেলার আবুরী গ্রামের মল্লিকপাড়ার আয়ুব আলীর ছেলে পুলিশ সদস্য রায়হানুল হক, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কাটিয়া গ্রামের মৃত জানকিনাথ সরকারের ছেলে গৌরাঙ্গ সরকার, ইটাগাছা গ্রামের ঘোষপাড়ার গণেশ মজুমদারের ছেলে বিকাশ মজুমদার বাবু ও উত্তর পলাশপোল গ্রামের আনিচুর রহমানের ছেলে মাহিন রহমান শাওন।

যশোর জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই দোকান মালিকের শ্যালক সাতক্ষীরার আনন্দ বসু এবং দোকানের কর্মচারী রাসেল যশোর থেকে স্বর্ণ কিনে প্রাইভেটকারে সাতক্ষীরার দিকে যাচ্ছিলেন। রাজারহাট রেল ক্রসিং এলাকায় পৌঁছালেই অজ্ঞাত কয়েকজন নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের প্রাইভেটকার থামিয়ে দেয়। এরপর তাদের চোখ বেঁধে ও হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ১৯ ভরি আট আনা স্বর্ণালংকার, নগদ ২৬ হাজার টাকা এবং চারটি মোবাইল ফোন ডাকাতি করে সটকে পড়ে। এই ঘটনায় সাতক্ষীরার সোনার দোকানের মালিক সুধীর কুমার বাদী হয়ে গত ১৫ জুলাই কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

মামলাটি তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা অলোক কুমার দে-র নেতৃত্বে একাধিক টিম মাঠে নামে। খুলনা ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে ষষ্ঠীতলাপাড়া বুনোপাড়ার ফরিদ হোসেনের ছেলে বহু মামলার আসামি নিশান হোসেন ও শার্শার গোগা গাজিপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে মো. উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার গলানো রূপে ৫ ভরি ১১ আনা উদ্ধার করা হয়।

পরে আটক আসামিদের স্বীকারোক্তিতে খড়কি বামনপাড়ার সোলেমান শেখের ছেলে রতন শেখ ও পুলেরহাট তফসি ডাঙ্গার ইয়ারব মোড়লের ছেলে মুসাব্বির হোসেন টুটুলকে পাকড়াও করেন চৌকস পুলিশ দলের সদস্যরা। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ জোড়া স্টিলের হ্যান্ডকাফ, ২টি ওয়াকি-টকি, ২টি কসটেপ এবং সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-খ-১১-৮০৫৭) উদ্ধার করা হয়েছে।এরপর রহস্যের জট খুলতে থাকে। তাদের মধ্যে একজন জানায় এ ঘটনার সঙ্গে আরও একজন জড়িত। এমনকি পুলিশ সদস্যও জড়িত রয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে। ডিবি পুলিশ সেই যুবকের সন্ধানে নামে। জানতে পারে তিনি একটি অপহরণ মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন। তাকে এ ডাকাতি মামলায় শোন অ্যারেস্টের আবেদন জানানো হয়। বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে ফিরোজের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করা হলে রিমান্ডেই মুখ খোলে ফিরোজ। তার কাছ থেকেই বেরিয়ে আসে পুলিশ কনস্টেবল রায়হানুল হকের কথা। যশোরের ডিবি পুলিশ সেই সূত্র ধরেই রায়হানসহ আরও চারজনকে আটক করে।

আদালত সূত্র জানায়, সোমবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল রায়হানুল হক ও মাহিন রহমান শাওন জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, রায়হানুল হক পুলিশ কনস্টেবল, মাহিন রহমান শাওন তার মোটরসাইকেলের সঙ্গী ছিলেন। গৌরাঙ্গ সরকার ও বিকাশ মজুমদার বাবু জুয়েলারি ব্যবসায়ী। ডাকাতির সময় সাদা পোশাকে থাকা রায়হানুল হকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে মাহিন রহমান শাওন ছিলেন। আর গৌরাঙ্গ সরকার ও বিকাশ মজুমদার বাবু একই এলাকার জুয়েলারি ব্যবসায়ী সুধীর কুমার দাস স্বর্ণ ক্রয়ের জন্য যশোরে তার লোক পাঠিয়েছেন এই সংবাদ ডাকাতদের গোপনে জানিয়েছিলেন। যশোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আটক ৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অলোক কুমার দে জানান, এ মামলায় মোট নয়জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৫ ভরি ১১ আনা সোনা। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তবে, মাস্টারমাইন্ডদের একজন রয়েছে আত্মগোপনে। দ্রুতই তাকে আটক করা হবে। পরে এ ঘটনায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার বলেন, জেলা পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং সাফল্যও অর্জন করেছে। তবে, পুলিশ কনস্টেবলের বিষয়ে তারা বলেন, অপরাধীদের একজন পুলিশ সদস্য কিনা সেটা এখনো আমরা নিশ্চিত নই। তবে, আমরা সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এখনো রিপ্লাই আসেনি। তিনি আরও বলেন, অপরাধী বিবেচনায় যশোর জেলা পুলিশ কাউকেই ছাড় দেবে না।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম গ্রামেরকাগজকে বলেন, পুলিশ অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবে। ইতোমধ্যে রায়হানুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে পুলিশ।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত
-->