যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মধ্যপাড়াতে বাড়িমালিক ও ভাড়াটিয়ারদের মধ্যে বিরুদ্ধের জোর ধরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভাড়াটিয়াদের করা মামলায় মালিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্বে ঘটনাটি ঘটলেও সেটিকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। বাড়ির মালিক খবিবর রহমান খানের ভাষ্যমতে, ভাড়াটিয়ারা এতদিন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে জোর করে তাদের জায়গা ও বাড়ি দখল করে রেখেছে। এখন তারা রাজনৈতিক ভোল পাল্টিয়ে জবরদখলে থাকার অপচেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে তাদের সম্পদ নষ্ট করে তাদের ওপরই দায় চাপাচ্ছে।
জানাগেছে দীর্ঘদিন বাড়ি ভাড়া না দেয়া ও জোরপূর্বক বাড়ি দখলের অভিযোগে ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে ও ইউনিয়ন পরিষদের লিখিত অভিযোগ করেছেন খবিবর খান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মীমাংশার জন্য বসাবসি হয়েছে। ভাড়াটিয়ারা একমাস সময় চেয়ে নিয়ে ছিলো, তার পরেও বাড়ি থেকে সরতে চাইছে না। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়ারা এদিন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে জোর করে থেকে এসেছে। এখন রাজনৈতিক ভোল্ট পাল্টিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, দখলদাদের উচ্চেদ করতে জমির মালিক কয়েক দফা উকিল নোটিশ, ইউনিয়ার পরিষদে দখলদার উচ্ছেদের জন্য আবেদন করেও কোন ফল পাননি। সরকার পরিবর্তনের পর দখলদারদের উচ্চেদ করতে আইনশৃঙ্গলা বাহিনীকে জানিয়েছেন তিনি। উভয় পক্ষ কয়েক দফা বসেছেন। আপোসের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ি ছেড়ে দেবে বলে জানায়। নির্দিষ্ট সময়ের বাড়ি না ছেড়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর চাপিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিয়োগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে দখল ও উচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গোলযোগ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ১/১১ পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর থেকে ভাড়াটিয়া ১২ পরিবার বাড়ির মালিককে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ পর থেকে ভাড়াটিয়া ও মালিকের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তখন বাড়ির মালিক খবিবর রহমান আওয়ামী শাসন আমলে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
জমির মালিক খবিবর রহমান খান বলেন, যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মৌজার ১৯৬.১৯৭ দাগে মোট ৩০ শতক জমি শাহেদ বকসের কাছ থেকে ক্রয় করেন। বি আর এস রের্কাড তার নামে হয়েছে। জমির নিয়মিত খাজনা তিনি পরিশোধ করে থাকেন। এ জমি নিয়ে আদালতে কোন মামলা নেই বলে জানান তিনি।
খবিবর রহমান খানের ছেলে আসলাম খান জানান, ১৯৬ ১৯৭ দাগের মোট ৩০ শতক জমিতে টিন টেডের ঘর নির্মাণ করে তাদেরকে ভাড়া দেওয়া হয়। শুরুতে ভাড়াটিয়ারা সঠিকভাবে ভাড়ার টাকা পরিশোধ এবং রশিদ নিয়েছেন। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ভাড়াটিয়ারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ভাড়ার টাকা দেয় না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় হুমতি দিয়েছে। সে সময় ভাড়াটিয়ারা বলতো, ‘আমরা কোনদিন তোর ভাড়ার টাকা দেব না। আর যদি কোনদিন ভাড়ার টাকা চাইতে আছিস তা হলে জামায়াত শিবির বলে জঙ্গি মামলা দিয়া ঘর ছাড়া করবো। তোকে ও তোর ছেলেমেয়েদেরকে জানে শেষ করে দেব।
এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর তাদেরকে দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেন খবিবর খান। কিন্তু তারা দখল ছাড়তে চায় না। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটিও হয়।
খবিবর খা, ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ করতে বিরোধে না গিয়ে আইনানুয়ায়ী আইনজীবীর মাধ্যকে ভাড়াটিয়া চান্দু, আয়নাল হক, ইসমাইল, কাল্লা (কালু), আবু জাফর, বাদশা, রাজুসহ ১২ জনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। তার পরেও তারা ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দেয়নি। পরে তিনি কোতয়ারী থানায় অবৈধ ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন।
খবিবর খান জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর পুলেরহাটস্থ অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে তার অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি হয়। এ সময় ভাড়াটিয়ারা উপস্থিত ছিলেন। জমির কাগজপত্র যাচাই শেষে ভাড়াটিয়াদের ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে জমির দখল ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা তা না করে জোর পূর্বক বাড়ি দখল করে রাখে।
খবিবর আরও জানান, এ বাড়ি ও জমি তার। দলিল ও রেকর্ড রয়েছে। খাজনাও তিনি পরিশোধ করে আসছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা আমার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক নয়।
গত ১৩ এপিলের ঘটনার বিষয় তিনি বলেন, ভাড়াটিয়ারদের সাথে মীমাংসা হয়ে ছিল-তারা ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়ি ও জায়গা ছেড়ে দেকে। সে দিন সকালে পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি পারপাশে বেড়া তৈরি করতে গেলে ভাড়াটিয়ারা বাধা দেয়ে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ঘরবাড়ি ভাংচুরের বিষয় তিনি বলেন, আমার বাড়ি আমি কেন ভাংচুর করবো। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়ারা আমার সম্পাদ নষ্ট করে আবার আমার নামে মামলা দিয়েছে। এখন বিষয়টি থেকে তারা রাজনৈতিক ফয়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে প্রতিপক্ষের মধ্যে মিলন, সালমা খাতুন শফিকুল ইসলাম বলেন, হামলাকরীরা আমাদের উপর দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা, বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। তবে তারা স্বীকার করেন যে, এ জমি তাদের না। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভাড়া নয়, ফ্রি বসবাস করছেন।
এই হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালক মিলন হোসেন বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই যশোর কোতোয়ালী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে রূপদিয়ার খবির খাঁ, জাহিদ আলী, রমজান আলী, সাদ্দাম হোসেন, জুবায়ের হোসেন, আসলামসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে এই হামলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা শরিফুল ইসলামের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার স্ত্রী সালমা খাতুনের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকার স্বর্ণের দুল নিয়ে যায়। রাজিয়ার ঘর থেকে এক লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের গহনা, ইসমাইলের ঘর থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, প্রিয়ার ঘর থেকে স্বর্ণের এক জোড়া কানের দুল, আনসারের ঘর থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, মিলনের ঘর থেকে ৪০ হাজার টাকা লুট করে। এছাড়া সিদ্দিকের বাড়ির আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ভাংচুর করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে হামলাকারীরা। হামলাকারীদের এলোপাতাড়ি মারপিটে আনসার, সুফিয়া, রাজিয়া, জানু, পারভীন ও সালমা বেগম জখম হন।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর পরিদর্শন করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। এসময় ক্ষতিগ্রস্তদের চাল ও নগদ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা জামায়াত আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, হামলা ও বাড়ি ভাংচুরের বিষয়টি জমাজমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ঘটেছে। একটি পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য জামায়াতের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কোন রাজনৈতিক দল এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের আটকের দাবি জানাচ্ছি