প্রশাসনের কঠোরতার মধ্যেও বিভিন্ন কৌশলে চিংড়িতে অস্বাস্থ্যকর জেলি পুশ করে বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত ১ বছরে র্যাবের অভিযানে যশোরে ১১টি চালান আটক করে আনুমানিক ৯ হাজার ৪৫ কেজি জেলিপুশকৃত চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৯০ লাখ টাকা। জরিমানা আদায় হয়েছে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। সর্বশেষ সোমবার রাতে যশোর শহরের মণিহার এলাকা থেকে মংলা টু ময়মনসিংহগামী শামীম এন্টারপ্রাইজ ও পিরোজপুর টু রাজশাহীগামী মেট্রোপলিটন দুইটি যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে এক হাজার কেজি চিংড়ি জব্দ ও ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলি পুশকৃত চিংড়ি শুধু দেশেই বাজারজাত করা হচ্ছে না। বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। এ কারণে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
সূত্র মতে, ওজন বাড়াতে ব্যবসায়ীরা সিরিঞ্জ দিয়ে জেলি পুশ করছে। এতে করে মাছের আকার ও ওজন বাড়ছে। আবার চিংড়িগুলো নষ্ট হচ্ছে না। চিংড়িতে ব্যবহৃত জেলি সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীর ক্ষত ঢাকার কাজে লাগানো হয়। যা সিলিকন জেলি নামে পরিচিত। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বাজার থেকে যে কেউ এগুলো কিনতে পারেন।
এমইউসি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস জানান, অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা অনেক পুরনো। এর আগে চিংড়িতে ছোট তারকাঁটা ঢুকিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। সেটি ধরা পড়ায় বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানি কমে গিয়েছিল। ওই অপতৎপরতা বন্ধে ধাতব পদার্থ নির্ণয়কারী যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। তাতে ওই অপতৎপরতা বন্ধ হয়। এবার ওজন বাড়াতে চিংড়িতে সিরিঞ্জের মাধ্যমে জেলি পুশ করা হচ্ছে। যা বরফে চিংড়ির শরীরের মধ্যে জমাট বেঁধে থাকে। তাই চিংড়ির খোলস ছাড়িয়ে আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে না দেখলে তা বোঝা যায় না।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক বলেন, চিংড়িতে পুশ করা জেলি মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে বড় ধরনের রোগব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সিলিকন জেলিকে নীরব ঘাতক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এসব মাছ ব্যবসায়ী নীরব ঘাতকের ভূমিকায় থেকে অগণিত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, চিংড়িতে ব্যবহৃত জেলটি যে কেউ কিনতে পারেন। এসব জেলি মানুষের চোখ, কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। ধীরে ধীরে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে।
যশোর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা এক কেজি চিংড়িতে ২৫০ গ্রাম জেল পুশ করছে। এতে প্রতি কেজিতে বিক্রেতা ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, জেলিপুশকৃত চিংড়ি বাজারজাত রোধে একেরপর এক অভিযান চালানো হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রুট বদলায়। কখনো যাত্রীবাহী বাসের ছাদ ও সাইড বক্সের ভেতরে চিংড়ি নিয়ে বাজারজাত করছে। সম্প্রতি এমন তথ্যের ভিত্তিতে যশোর শহরের মনিহার বাস টার্মিনাল থেকে সীমান্ত নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের ছাদে থেকে দুইদিন অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জেলিপুশকৃত চিংড়ি জব্দ করা হয়। এসময় বাস মালিককে জরিমানাও করা হয়। সর্বশেষ সোমবার রাতে একই স্থান থেকে মংলা টু ময়মনসিংহগামী শামীম এন্টারপ্রাইজ ও পিরোজপুর টু রাজশাহীগামী মেট্রোপলিটন দুইটি যাত্রীবাহী পরিবহনে অভিযান চালিয়ে এক হাজার কেজি চিংড়ি জব্দ ও ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। র্যাবের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।