কর্মের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে যশোরাঞ্চলের ২০ সহস্রাধিক পরিবহন শ্রমিকের। এক মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়াসহ ২১ রুটে সহস্রাধিক বাস চলাচল শুরু করেছে। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও এ অঞ্চলের পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে করোনার ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। সার্বিক এ পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু তাতেও মানুষকে ঘরে রাখতে না পেরে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যা আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
এদিকে, দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণায় থমকে যায় গণপরিবহনের চাকা। ৫ এপ্রিল থেকে বেকার হয়ে যায় যশোরাঞ্চলের ২০ সহস্রাধিক পরিবহণ শ্রমিক। তারা গত একমাস ঘরে বসেই অলস সময় কাটিয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় তারা গণপরিবহন চালু ও করোনাকালীন সরকারি ভাতার দাবিতে বিক্ষোভসহ প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া জেলায় মালিক এবং শ্রমিক মিলে তাদের অর্ধশতাধিক সংগঠন রয়েছে। একইসাথে যশোর থেকে ২১টি রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এরমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ সংগঠন যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনে ২০ সহস্রাধিক সদস্য রয়েছেন। এসব সদস্য গত একমাস ঘরে বসে হতাশায় বেকার জীবন কাটিয়েছেন। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে তাদের সে জীবনের কিঞ্চিত পরিবর্তন ঘটছে। এদিন থেকেই পরিবহনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। তবে সে চাকা ঘোরা জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বাসগুলো সরকারি নিদের্শনা মেনে স্ব স্ব জেলার সীমানার মধ্যেই চলাচল করছে। এক্ষেত্রে গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী বহন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলাচল করতে হচ্ছে। অবশ্য সরকারি এ নিদের্শনা নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। তারা বলেছেন, এ স্টাইলে বাস চলাচল করলে সড়কে জটিলতা ও যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে। এছাড়া, যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে গোলযোগের সৃষ্টি হবে।
এদিকে, চলমান লকডাউনের বিধিনিষেধ আগামী ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। তবে বন্ধ থাকবে আন্তঃজেলা গণপরিবহন। এছাড়া আগের মতো ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকবে। এছাড়া জেলার মধ্যে বাস চলাচল এবং আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, জেলায় জেলায় গণপরিবহন চলাচলে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাসে করে যাত্রী নিয়ে জেলার সীমান্তে নামিয়ে দিলে শ্রমিকদের সাথে যাত্রীদের গোলযোগ হবে। এ সিদ্ধান্তে মালিক ও শ্রমিকদের কোন উপকার হবে না। যশোর থেকে ২১টি রুটে সহস্রাধিক বাস যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। এসব পরিবহনে শ্রমিকরা সাময়িকভাবে কাজে যোগদান করলেও বেতন ভাতা ও আয় আগের মত হবে না। ফলে কষ্টেই কাটবে শ্রমিকদের জীবন।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রখ্যাত একজন শ্রমিক নেতা টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পরিবহন মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বাড়িতে পৌছে দিচ্ছেন। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের কোন শ্রমিকের বাড়িতে তো দূরের কথা, মালিকদের ঘরের দরজায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও শ্রমিকরা কোন বেতন ভাতা পাননি। তিনি সরকারকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অতিরিক্ত মহাসচিব আলী আকবর বলেন, দেশের ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে সরকারের সব নিদের্শনা তারা মেনে চলবেন। তবে তিনি শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, সিএনজি, থ্রি হুইলার, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট গাড়িতে কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আগের মতই এসব গাড়িতে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। একইসাথে এসব গাড়িগুলো দূরপাল্লার রুটেও চলাচল করছে। যা আইনত অবৈধ। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির আহবান জানান।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সরকারি নিদের্শনা মেনে যাতে জেলায় গণপরিবহন চলাচল করে সে বিষয়ে প্রশাসন নজরদারি করবে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম। অনিয়ম করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান জেলা প্রশাসক।