আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ১২:২৩

যশোর-চট্টগ্রাম ফ্লাইট বরিশালকে সংযুক্তির দাবি

দেশের ৩টি প্রশাসনিক বিভাগ এবং প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরা ছাড়াও পায়রা, মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে সরাসরি আকাশ পথে সংযুক্তির লক্ষ্যে যশোর-চট্টগ্রাম রুটে রাষ্ট্রীয় বিমান ফ্লাইট চালুর সব আয়োজন সম্পন্নের ৭ মাস পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। পাশাপাশি ওই রুটে বরিশালকে অন্তর্ভুক্তির দাবিটিও হারাতে বসেছে। অথচ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ যশোর-চট্টগ্রাম রুটের প্রস্তাবিত ফ্লাইটটিতে বরিশালকে অন্তর্ভুক্ত করে চালুর দাবি জানিয়ে আসছে। তবে গত ১ অক্টোবর থেকে প্রায় দেড়গুণ ভাড়ায় বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যশোর-চট্টগ্রাম ফ্লাইট চালু করেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যশোর বিমান বন্দরে এ ফ্লাইট উদ্বোধন করেন। বরিশাল প্রেসক্লাব ও বরিশাল চেম্বার সভাপতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাস্তবতার নিরিখে অবিলম্বে যশোর-বরিশাল-চট্টগ্রাম আকাশ পথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছেন।
পুরনো দু’টির সাথে নতুন ৩টি ‘ড্যাস-৮’ এয়ারক্রাফট নিয়ে গত মার্চের মধ্যভাগ থেকে দেশের সব অভ্যন্তরীণ সেক্টরে নতুন করে বিমান তার ফ্লাইট চালু করে। এসময় ২৮ মার্চ থেকে প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার যশোর-চট্টগ্রাম রুটে এবং রবি ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-যশোর রুটে বিমান যাত্রী পরিবহনের সিডিউল ঘোষণা করে। এ রুটে এক পথে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ২শ’ টাকা। গত ২৬ মার্চ বরিশাল সেক্টরে নিয়মিত ফ্লাইট চালু উপলক্ষে স্থানীয় একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে বিমানের এমডি ও পরিচালক-প্রশাসন অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সর্র্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত যশোর-চট্টগ্রাম ফ্লাইট পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এ আকাশ পথে বরিশালকে সংযুক্তিরও দাবি জানান। এ প্রেক্ষিতে বিমান কর্তৃপক্ষ বিষয়টির সাথে নীতিগত একমত পোষণ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথাও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু করোনা মহামারীর ভয়াবহ বিস্তারে বিমানের ওই ফ্লাইট আর চালু করা যায়নি। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসলেও বিমান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে গত ৭ অক্টোবর বিমান সৈয়দপুর-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চালু করেছে।
অপরদিকে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স গত ১ অক্টোবর থেকে প্রায় দেড়গুণ ভাড়ায় যশোর-চট্টগ্রাম আকাশ পথে ফ্লাইট চালু করলেও বরিশালকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলদের মতে, খুব শিগগিরই তাদের বহরে নতুন এয়ারক্রাফট যোগ হলেই বরিশালের সাথে চট্টগ্রামের ফ্লাইট চালু হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ থেকে প্রায় ’৯০ সাল পর্যন্ত যশোর-চট্টগ্রাম রুটে সপ্তাহে দু’দিন বিমানের ফ্লাইট চলতো। পরবর্তীকালে বিমানেরই একটি মহলের অনীহার কারণে যাত্রীবান্ধব এ আকাশ পরিসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সুদূর চট্টগ্রাম থেকে সমগ্র খুলনা বিভাগ ছাড়াও বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর ও মোংলার সহজ যোগাযোগটি বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি চট্টগ্রামের যেসব ব্যবসায়ীরা বেনাপোল হয়ে ভারতের সাথে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি করছেন তাদের দুর্ভোগও বর্ণনাতীত। চট্টগ্রাম থেকে কোলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী যাত্রীদেরও সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করে ১৮-২০ ঘণ্টায় বেনাপোল যেতে হচ্ছে।
অপরদিকে, বরিশাল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে এখনো ২০-২৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। অথচ ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পেশাগত কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ৩ লক্ষাধিক মানুষ চট্টগ্রাম মহানগরীতে বসবাস করছেন। এছাড়াও প্রতিদিন যে বিপুল সংখ্যক যাত্রী বিভিন্ন প্রয়োজনে বরিশাল থেকে যশোর, বেনাপোল বা ভারতে যাতায়াত করেন, তাদেরও সড়ক পথে পৌঁছাতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগছে। এসব বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলবাসী দীর্ঘদিন ধরেই যশোর-বরিশাল-চট্টগ্রাম আকাশ পথে বিমানের ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে বিমানের পরিচালক বিক্রয় ও বিপণন সিদ্দিকুর রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি যশোর-বরিশাল-চট্টগ্রাম ফ্লাইটের প্রয়োজনীয়তার সাথে একমত পোষণ করে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সম্ভব সব কিছু করবেন বলে জানান।
বরিশাল চেম্বারের সভাপতি সাঈদুর রহমান রিন্টু অবিলম্বে যশোর-বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বিমানের ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়ে এতে দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতার দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনার অবসান হবে বলে জানান। বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতি মু. ইসমাইল হোসেন নেগাবান পায়রা সমুদ্র বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলকে চট্টগ্রাম ও খুলনা-যশোর-বেনাপোলের সাথে সংযুক্তির লক্ষ্যে যশোর-বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে আকাশ পরিসেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন। এতে করে দেশের ৩টি প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে সহজ ও দ্রুত যোগাযোগ চালু হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আরো সংবাদ