আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৬:২৫

যশোর ত্রাণের ‘চাল চোর’এর জবানবন্দি- ফেঁসে যাচ্ছেন দু যুবলীগ নেতা।

মুনতাসির মামুন।। যশোরের মণিরামপুরে সরকারি পাঁচশ’ ৪৯ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় সিন্ডিকেট নেতা শহিদুল ইসলামকে অবশেষে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। আটক শহিদুল ইসলাম মণিরামপুর পৌরসভার তাহেরপুর এলাকার মৃত সোলায়মান মোড়লের ছেলে। রোববার শহিদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর তাকে বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। তবে তার আদালতের জবানবন্দিতে ফেঁসে যাচ্ছে চাল সিন্ডিকেটে জড়িত দু’যুবলীগ নেতা।
আটক শহিদুলকে আদালতে সোপর্দ ও জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মেদ।
গত ৪ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মণিরামপুর থানা পুলিশের একটি টিম ভাইভাই রাইস মিল এন্ড চাতালে অভিযান চালায়। পরে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর উপস্থিতিতে সরকারি কাবিখার পঁাঁচশ’ ৪৯ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। এসময় আটক করা হয় চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদারকে। অবশ্য এসময় সেখানে চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ উপস্থিতদের সামনে চাল পাচারের ঘটনায় খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ও চাল বেচাকেনার সিন্ডিকেটের সদস্য শহিদুল ইসলাম, অষ্টম দাস, জগদিশ দাসসহ জড়িত অনেকের বলেছিলেন।
এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম মিডিয়ার সামনে তার পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তি বাচ্চুকে সরকারি চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় দোষী হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু পুলিশ শুধুমাত্র চাতালমালিক মামুন এবং ট্রাকচালক ফরিদের নামে মামলা করে।
পুলিশ ৫ এপ্রিল মামুন এবং ফরিদকে যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরাম হোসেন দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৭ এপ্রিল তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বসুর আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক মামুন এবং ফরিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মণিরামপুর থানার ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করে চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় তাদের সাথে আরও জড়িত ছিলেন সিন্ডিকেট নেতা শহিদুল ইসলাম, জগদিশ দাস এবং আরও দু’কর্মকর্তা।
শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ২১ এপ্রিল যশোর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে সরকারি চাল আটক হবার পর পরই সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মনিরুজ্জামান মুন্নাকে খুলনায় বদলি করা হয়।
এদিকে, আটক চাতালমালিক আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার রাতে মণিরামপুর পৌর এলাকার তাহেরপুর নিজ গ্রাম থেকে মৃত সোলাইমান মোড়লের পুত্র শহিদুল ইসলামকে ডিবি পুলিশের একটি দল আটক করে।
ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আটক শহিদুল ইসলাম রোববার আদালতে তার জবানবন্দিতে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সরকারি চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী আরও দু’যুবলীগ নেতাসহ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। এর আগে ট্রাকভর্তি ৫শ’ ৪৯ বস্তা সরকারি চাল কালোবাজারে বিক্রিকালে চালসহ আটক চাতালমালিক মামুন আদালতে জবানবন্দি প্রদানকালে শহিদুলসহ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেন। এছাড়া, আটক ট্রাকচালক খুলনা দৌলতপুরের ফরিদ হাওলাদার একইভাবে তার জবানবন্দিতে বলেছিলেন সরকারি চাল গুদামে আনলোড না করিয়ে ভাই-ভাই রাইচ মিলে নিয়ে যাবার জন্য তাকে বলা হয়। সে তার জবানবন্দিতে উক্ত চাল বিক্রির ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে মণিরামপুর খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের নাম প্রকাশ করে।
অপরদিকে, আটক মামুনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক জড়িত অপর সিন্ডিকেট সদস্য পৌরশহরের জুড়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী জগদিশ দাসসহ চাল সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রাঘর-বোয়ারদের পুলিশ এখনো আটক করতে পারেনি। এ ব্যাপারে যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মেদ সিন্ডিকেট নেতা শহিদুলকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শহিদুলকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটক শহিদুল চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় জড়িত সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী আরও দু’যুবলীগ নেতাসহ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও জানান, সরকারি চাল বিক্রির ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ঘটনার জড়িত বাকি আসামিদের খুব দ্রæত আটক করা হবে।

আরো সংবাদ