আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ১:৫৪

যশোর বসুন্দিয়া জোর করে ডিভাের্স দিয়ে সন্তান নষ্ট করে মামার সাথে বিয়ে: মামলা-২

যশােরের বসুন্দিয়ায় এক গৃহবধূকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভের সন্তান নষ্ট করা হয়েছে। এমনকি অস্ত্রের মুখে এক স্বামীর কাছ থেকে তালাক করিয়ে মামা সম্পর্কীয় একজনের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দত্তক মাসহ দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাঘারপাড়ার অফিসার ইনচার্জও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধারে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। সরেজমিনেও এর সত্যতা মিলেছে। ভুক্তভােগী গৃহবধূ বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে আকুতি জানিয়েছেন। মামলা সূত্রে ও সরেজমিনে তথ্য মিলেছে, বসুন্দিয়ার কাঠ ব্যবসায়ী আলমগীর হােসেনের ভাড়াটিয়া দত্তক নেয়া দম্পতি হাবিবুল্লা ও হামিদা খাতুনের মেয়ে উষা খাতুন ভালবেসে বিয়ে করেন বাঘারপাড়ার ষাটখালি গ্রামের মুনসুর মােড়লের ছেলে জাকারিয়া হােসেনকে। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট বিয়ে করে তারা সংসার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে গত ৮ জুলাই উষা খাতুনকে বাড়ি নিয়ে আটকে রাখেন দত্তক মা হামিদা খাতুন। এরপর থেকে তাকে আটকে রাখা হচ্ছে ঘরে দরজা বন্ধ করে। জাকিরের পক্ষে উষার গর্ভে থাকা সন্তান নষ্ট করে দেয়া হয় উষার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। ঘরে বন্দী থাকা উষা খাতুন নিরুপায় হয়ে এসএমএস-এর মাধ্যমে বিষয়টি পরিচিতদের অবগত করেন। এখানেই শেষ নয়, মামা সম্পর্কীয় বিপুল তার গলাই ধারালাে অস্ত্র ঠেকিয়ে জাকিরকে তালাক করিয়েছে। এমনকি উষাকে মামা সম্পর্কীয় সুমন নামে অপর এক যুবকের সাথে তার পরিবার বিয়ে দিয়েছে।

এই সুমন বাঘারপাড়ার আলাদিপুরের ওলিয়ার রহমানের ছেলে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বসুন্দিয়ায় গ্রামের কাগজের এক সাংবাদিক খোঁজ-খবর নিতে গেলে দেখা যায় হামিদা খাতুন ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। তিনি কাঠ ব্যবসায়ীর বাড়ি ছেড়ে এলাকার বাঁচতে শেখা ভবনে বাসা ভাড়া নিয়ে মেয়েকে আটকে রেখেছেন। স্থানীয় কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয় ভূক্তভােগী উষার সাথে । আমরা সাংবাদিক বলে পচিয় দিলে উষা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তার উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ননা দেন। তিনি জানান, হামিদা খাতুন তার আসল মা নন। তিনি তাকে দত্তক নিয়ে মানুষ করেছেন সত্য, তবে এখন নিজের স্বার্থে তার উপর নির্যাতন করছেন। তাকে ঘরে আটকে রেখে অস্ত্র ঠেকিয়ে ডিভোর্স করিয়েছেন। জোর করে বিয়ে দিয়েছেন মামা সম্পর্কীয় যুবকের সাথে। তিনি তাকে উদ্ধারের জন্যও জোর আকুতি জানান। তার উপর নির্যাতন চলছে প্রতিনিয়তই। তিনি জানান, তাকে এখান থেকে উদ্ধার না করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এদিকে যার সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে সেই সুমন প্রথমে নিজেকে উষার মামা বলে পরিচয় দেন। পরে সাংবাদিক জেনে পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে দত্তক মা হামিদা খাতুন জানিয়েছেন, তিনি উষাকে নির্যাতন করেননি। সে আমার মেয়ে। আপন মেয়ে কিনা জানতে চাইলে আমতা আমতা করে জানান পালিত মেয়ে । কিন্তু সন্তান নষ্ট করার ঘটনায় তিনি জড়িত নন। আগের জামাই জাকির মেয়েকে খাওয়া পরা দিতনা। মারপিট করায় ছাড়িয়ে নিয়ে নতুন করে বিয়ে দিয়েছি এলাকার মালেক কাজীর মাধ্যমে। এছাড়া উচ্চ স্বরে জানান “মেয়েকে নির্যাতন করি বা ভালবাসি এটা আমার ব্যাপার, তাতে অন্যের কি”। এরপর তিনি তার পরিচিত বিভিন্ন মহলে ফোন করে তােক ডেকে আনেন। ওই সময় তার লােকজন মােটরসাইকেল যােগে এসে এ প্রতিবেদকের সামনে এসে হম্বিতম্বি করে। এমনকি রাজনৈতিক মহলে নাম ভাঙান । এদিকে ওই মােটরসাইকেল আরােহীদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তারা হামিদা খাতুনের দালাল বলে পরিচিত। এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আল মামুন জানিয়েছেন, হামিদা খাতুন উষার আপন মা নন। অভিযােগ ও আদালতে মামলা সূত্রে হামিদা খাতুনকে নিয়ে থানায় বসা হয়েছিল। যেহেতু মেয়ে ভালবেসে জাকিরকে বিয়ে করেছে তাই মেনে নিয়ে আত্মীয়তা করবেন বলে জানান হামিদা। এরপর মেয়েকে নিয়ে তিনি চলে যান। কিন্তু পরে জানতে পেরেছেন হামিদার চরিত্র খারাপ। নিজের স্বার্থে মেয়েকে আটকে রেখেছে। অন্যায়ভাবে নতুন করে বিয়ে দিয়েছে। এখন মেয়ে দত্তক মায়ের বন্দীদশা থেকে বাঁচতে চাইছে। তার কাছে এসব বিষয়ে অভিযােগ এসেছে। তিনি ওই মেয়েকে উদ্ধারের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

সূত্র : গ্রামের কাগজ

আরো সংবাদ