যশোরের বেনাপোলে দুটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছয়জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ১৮ মে এসব যাত্রী ভারত থেকে ফিরে বেনাপোলের দুটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। মঙ্গলবার (১ জুন) ভারতফেরত ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।
করোনায় আক্রান্ত ছয় যাত্রীকে পুলিশি পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নেয়া হয়েছে। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোল বাজারের মৌ আবাসিক হোটেল ও চেকপোস্টে অবস্থিত নিশাত বোর্ডিংয়ে গত ১৩ দিন ধরে ভারতফেরত ওই ছয় যাত্রী প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন বলে জানা যায়।
ভারতফেরত যাত্রী রিশপা বাশারের স্বামী জানান, গত ১৮ মে তারা বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে ভারত থেকে ফিরে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ছাড়পত্র পেয়েছেন বাড়ি ফেরার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার স্ত্রীর করোনা পজিটিভ হয়েছেন। স্ত্রী সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন এমনকি শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই তবুও ফলাফল পজিটিভ এসেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে শার্শা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ভারতফেরত সকল যাত্রী করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফিরছে তারপরও সরকারি নির্দেশনায় বাড়তি সচেতনতায় আমরা ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছি। গত শনিবার (৩১ মে) তাদের নমূনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। নমুনা পরীক্ষায় বেনাপোলের দুটি আবাসিক হোটেলে থাকা ছয়জন ভারতফেরত যাত্রীর ফলাফল পজিটিভ এসেছে।
সংক্রামন রোধে ইতোমধ্যে আক্রান্তদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। সাথে সাথে হোটেল কর্তৃপক্ষকে ওই ছয় যাত্রীর থাকার জায়গাগুলো সঠিকভাবে স্যানেটাইজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, গত এপ্রিল মাসে যশোরে করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশ। মে মাসের শুরুতেই শনাক্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী হলেও মাসের শেষের দিকে আবারও বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার জেলায় ২৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রী রয়েছেন ছয়জন। আক্রান্তদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোরে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন যশোরের মানুষ। সেই সঙ্গে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যবিভাগও। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে বন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনিয়মকারীদের জরিমানা করা হচ্ছে। বন্দরের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, গ্রাম পুলিশ ও বাণিজ্যিক সংগঠনের নেতারা বন্দর এলাকায় মাইকিংসহ সচেতনতায় কাজ করছেন।
যশোর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যশোরে এখনই ‘কঠোর লকডাউন’ না দিয়ে অন্যভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী গত দুইদিন ধরে জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে মাস্ক পরা, ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। যারা এইসব সতর্কতা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতেও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে যশোরে ফের ‘লকডাউন’ দেয়া হতে পারে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।