আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৮:৫৭

রাষ্ট্রীয় নির্দেশ উপেক্ষিত – রূপদিয়ায় কোচিং বাণিজ্য চলছেই : প্রশাসন চুষছে আঙ্গুল।

আবুল বারাকাত।। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সোমবারের পর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এমনকি এ সময় কোচিং সেন্টারও অবশ্যই বন্ধ থাকবে। এমন নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের রূপদিয়া বাজারের অসাধু কিছু শিক্ষক/প্রশিক্ষক। সরকারি এই নির্দেশনার পরেও রূপদিয়াতে বন্ধ হয়নি কোচিং সেন্টারের আদলে পরিচালিত প্রাইভেট সেন্টারগুলো। প্রতিদিনই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে প্রাইভেট সেন্টারগুলো থেকে বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে অত্র অঞ্চলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও বন্ধ হয়নি প্রাইভেট বানিজ্য।

দলবেঁধে কোচিংএ যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

খোঁজ নিয়ে জানা যায় স্থানীয় প্রশাসনের চোখ এড়াতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের ড্রেসের বাইরে বোরকা পরে প্রাইভেটে আসতে উৎসাহিত করছে এসব শিক্ষক/প্রশিক্ষকরা। প্রাইভেট-কোচিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রাণঘাতি করোনার মতো ভাইরাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এক শ্রেণীর শিক্ষক এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।

এদিকে একাধিক অভিভাবক নিজেদের নাম পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষার্থীদের জীবন নয়, তাদের কাছে টাকাটাই মুখ্য হয়ে গেছে। তাই তারা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রাইভেট পড়ানো অব্যাহত রেখেছে। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদেরকে অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যাচে পড়তে যেতে হচ্ছে। কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তাকে ফোন করে ব্যাচে ডেকে নেয়া হচ্ছে। সিলেবাসে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রাইভেটে পাঠাতে হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ করেন এলাকার একাধিক অভিভাবক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কোচিং সেন্টারের মালিক বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছি কিন্তু কিছু কিছু কোচিং এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মালিকরা প্রাইভেট নাম দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না যা আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

আজ বৃহস্পতিবার রূপদিয়া যশোর-খুলনা রোড সংলগ্ন (মুনসেফপুর মোড়) আলফা গোডাউনের ভেতরে জাকারিয়া, জিরাট আলিম মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানেরই সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক তাজুল ইসলাম, কৃষি ব্যাংকের তৃতীয় তলায় সাকসেস কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন রূপদিয়া শাখা অফিসের পেছনে আসিফুর রহমান, রূপদিয়া বাজার হিরন মার্কেটে কম্পিউটার পয়েন্ট এর পরিচালক তরিকুল ইসলাম সহ রূপদিয়া বটতলায়, কলাপট্টি, শিশুতলাতে একাধিক কোচিং এবং কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের মালিকেরা প্রতি ব্যাচে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কোচিং/ট্রেনিং করিয়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় সরকারি ঘোষণার তোয়াক্কা না করেই কেউবা নিজ বাড়িতে কেউবা ভাড়া করা ঘরে আবার কেউ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে রীতিমতো কোচিং/ট্রেনিং চালাচ্ছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এরকম চিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আজ সকাল ৯ টায় রূপদিয়া যশোর-খুলনা মহাসড়কের পূর্ব পাশে মুনশেফপুর মোড়ের একটি পরিত্যক্ত গোডাউনে ২ জন শিক্ষকের পরিচালনায় দুইটি ব্যাচে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে। ক্লাসরুম থেকে মাত্র ১০ ফুট দুরত্বে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরু পালন করা হচ্ছে। এসময় এলাকার একজন সচেতন অভিভাবক কে নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখার কথা বলা হলে তিনি সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের কে ছুটি দিয়ে দেন।পরবর্তীতে তিনি একাধিক মহল দ্বারা বারবার ফোন করিয়ে নিউজ প্রতিনিধিকে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করান এবং নিজের ফোনটাও বন্ধ করে রাখেন।

সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তাৎক্ষণিক কোচিং ছুটি দিয়ে দেন জাকারিয়া।

জিরাট আলেম মাদ্রাসার সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক তাজুল ইসলাম ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তার কোচিং ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নিচতলায় তালা ঝুলিয়ে মূল দরজার বাইরে দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে তার পাঠদান চালাচ্ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থীদের চিল্লাপাল্লা শুনে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের কে নিয়ে তার কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি কোচিং করাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জনাব আবু জাফর সাহেবের সাথে কথা বলতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মাদ্রাসা শ্রেণিকক্ষেই প্রাইভেট পড়াচ্ছেন সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক তাজুল ইসলাম।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা না মেনেই রূপদিয়া বাজারের কৃষি ব্যাংকের তৃতীয় তলায় সাকসেস কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার রীতিমতো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রেনিং সেন্টারটির পরিচালক আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা এড়িয়ে যান এবং বলেন,” আমার প্রতিষ্ঠান থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কোন সুযোগই নেই আমার এখন আপনাদের সাথে কথা বলার সময় নেই। আমি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ক্লাস চালিয়ে যাব।”

সাকসেস কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়মিত চলছে প্রশিক্ষণ

রূপদিয়া বাজারের সবথেকে জনবহুল একটি মার্কেট হিরন মার্কেটে অবস্থিত আরেকটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “কম্পিউটার পয়েন্ট” এ আজও কার্যক্রম চলেছে। প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত প্রশিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন “আগামীকাল শুক্রবার আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শনি এবং রবিবার যথারীতি আমাদের ক্লাসের কার্যক্রম চলবে।” পরে ওই প্রশিক্ষককে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তরিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বললে তিনি তার অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।

এছাড়াও আসিফুর রহমান নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী রূপদিয়া বাজার জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন অফিসের পেছনে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যাচ পড়াচ্ছেন। তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি স্থানীয় দুইজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে আসেন এবং জানান যে তিনি জানতেন না যে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।

আসিফুর রহমান শিক্ষার্থী কম হলেও ছুটি দেননি

এছাড়াও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিভিন্ন স্থানে ৫ -১০ জন নিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর নামে জটলা তৈরি করা হচ্ছে। যা করোনা ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান কারণ হতে পারে।

স্থানীয় সচেতন অভিভাবক এবং জনপ্রতিনিধিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা কোন এক অলৌকিক শক্তির প্রভাব খাটিয়ে অত্র অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও এ ধরনের কার্যক্রমে কেন লিপ্ত হচ্ছে জনমনে এ ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে??

আরো সংবাদ