আজ - রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৫৮

শিগগিরই স্বাভাবিক রুটিনে ফিরছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দেড় বছর পর স্কুল কলেজ খুললেও ক্লাস হচ্ছে সীমিত পরিসরে। করোনার কারণে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্যই সব শ্রেণীর সব ক্লাস এখন হচ্ছে না। তবে আশার কথা হচ্ছে সংক্রমণের হার দ্রুত কমে আসায় এখন স্বাভাবিক রুটিনে ফেরার অপেক্ষায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার শর্তও শিথিল করে এখন এক ডোজ নেয়া শিক্ষার্থীদেরও হলে উঠার বা ক্লাসে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নিয়ে এসে খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সংক্রমণের হার এভাবে কমতে থাকলে আশা করা হচ্ছে শিগগিরই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসবে।

যদিও অনেক আগেই শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি জানিয়েছিলেন, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে পাঠাতে পারব। এখন সংক্রমণের এই হার অবশ্য ৫ শতাংশের নিচেই রয়েছে। তাই স্কুল কলেজ স্বাভাবিক রুটিনে ফিরতে ঝুঁকিগত কোনো বাধা থাকছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল কলেজ খুলে দেয়া হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অতি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে পঞ্চম শ্রেণী ছাড়া বাকি অন্যান্য শ্রেণীর ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিইপি) থেকে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং সংক্রমণের হার কমে আসায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস সপ্তাহে এক দিনের পরিবর্তে দুই দিন করার ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়েকটি শ্রেণীর একাধিক ক্লাস বাড়ানোরও ঘোষণা দেয়া হয়। সর্বোপরি এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবস্থানের সুযোগ দিয়ে ক্লাসে ফেরানোরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। করোনার পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে শিগগিরই স্কুল কলেজের ক্লাসের রুটিন পরিবর্তন করে স্বাভাবিক রুটিনে ফেরার ঘোষণা আসতে পারে।

এ দিকে স্কুল কলেজের পাশাপাশি মাদরাসাগুলোতেও শ্রেণীভিত্তিক ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখন থেকে ইবতেদায়ি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস হবে। এ বিষয়ে গতপরশু (মঙ্গলবার) সংশোধিত রুটিন প্রকাশ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর।

সেখানে সংশোধিত রুটিনে দেখা যায়, মাদরাসাগুলোতে সপ্তাহে ছয় দিনই ইবতেদায়ি শাখার পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস হবে। এর সাথে ইবতেদায়ি শাখায় সপ্তাহের শনি ও সোমবার তৃতীয় শ্রেণীর এবং রোব ও বৃহস্পতিবার চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হবে মাদরাসাগুলোকে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গলবার দ্বিতীয় শ্রেণীর, বুধবার প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া দাখিল মাদরাসাগুলোতে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দাখিল পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হবে। আর আগের মতোই শনিবার দাখিল নবম শ্রেণীর, সোমবার সপ্তম শ্রেণীর, মঙ্গলবার ষষ্ঠ শ্রেণীর, বুধবার নবম শ্রেণীর ক্লাস নিতে হবে মাদরাসাগুলোকে। এ ছাড়া সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার দাখিল অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস নেয়া হবে। অবশ্য এর আগে গত ২ অক্টোবর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস এক দিনের পরিবর্তে সপ্তাহে দুই দিন করে ক্লাস হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে সরব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। এখন এসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলো খুলবে আগামী ১৭ অক্টোবর এবং ২০ অক্টোবর সশরীর ক্লাস শুরু হবে। ২১ অক্টোবর খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তার আগে ১১ অক্টোবর এখানকার আবাসিক হল খুলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচিতে গতি বাড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই টিকাকেন্দ্র খুলে সেখানে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে যেসব শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে তারা টিকার কার্ড দেখিয়ে হলে উঠতে পারবে। আর যারা টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদেরকেও দ্রুততার সাথে টিকা নিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে চলতি মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অন্য দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন করেই খুলতে হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন  জানান, শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদেরও বলে দিয়েছি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেয়া নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে আরো শর্ত হলো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিশ্চিত করতে ১৮ বছরের কম বয়সের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দেয়া হলেও গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে এই মুহূর্তে ১৮ বছরের কম বয়সের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া জরুরি নয়। তাই এই সিদ্ধান্ত পরে বাস্তবায়িত করা হবে।

বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক ও গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রফেসর মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ  জানান, স্কুল কলেজ খোলার জন্য শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া জরুরি নয়। বরং তাদের (শিক্ষার্থীদের) অভিভাবকদের টিকা দেয়া নিশ্চিত করতে পারলেই সব শিক্ষার্থী নিরাপদ থাকবে। স্কুল কলেজে গেলেও শিক্ষার্থীদের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫১টি। এর মধ্যে চারটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। বাকিগুলোর মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজ, মাদরাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আর পাঁচটি আছে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার বিষয়ে ইউজিসি সূত্র জানায়, ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে খুলছে। বেশির ভাগই দিন তারিখ ঠিক করেছে। শিক্ষার্থীদের করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেয়া সাপেক্ষে আবাসিক হলে ওঠার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

আরো সংবাদ