আগামীকাল শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই শেষ মুহূর্তেও রাজধানী ঢাকা থেকে আসা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভিড় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় এই নৌপথে বাড়ানো হয়েছে ফেরির সংখ্যা। সকাল থেকে অল্প যানবাহন ও শত শত যাত্রী নিয়ে পারাপার হচ্ছে ১৭টি ফেরি।
এদিকে ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রী চাপে গতকাল বুধবার এই নৌপথের বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি শাহ পরান ও এনায়েতপুরী থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে গতকাল বিকেলে থেকে বাংলাবাজার ঘাটে যানবাহন লোড না করেই ফেরি যাচ্ছে শিমুলিয়া ঘাটে। ফেরিতে যানবাহন পারাপার না করায় উভয় ঘাটে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ঘাটে আটকা পড়ে সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা।বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় বর্তমানে একটি ফেরি বেড়ে ১৭টি ফেরি চালু রয়েছে। আমরা বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে কোনো যানবাহন লোড দিচ্ছি না। কারণ, ওপার শিমুলিয়ায় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় যানবাহন আনলোড করা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল একটি লোড ফেরি শিমুলিয়া থেকে আবার বাংলাবাজার ঘাটে ফিরে আসে। যাত্রীর চাপ না কমলে ফেরিতে যানবাহন লোড দেওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, উভয় ঘাটে যানবাহনের চাপ আছে। তবে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেশি। বাংলাবাজার ঘাটে আসা যানবাহনগুলোকে বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সকাল ১০টায় বাংলাবাজার ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায় ঘাটে সব কটি পন্টুনে যাত্রীদের ভিড়। বাংলাবাজার ঘাটে ভেড়া ফেরিগুলোয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ছাড়া ছিলেন হাজার হাজার যাত্রী। ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হচ্ছেন তাঁরা। বাংলাবাজার ঘাটে নেমে যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্র, ইজিবাইকে করে ভেঙে ভেঙে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
খুলনাগামী যাত্রী রাশেদ কামাল বলেন, ‘ঘাট থেকে মোটরসাইকেলে খুলনার ভাড়া চাইতাছে ২০০০ টাকা। বাসে ৩০০ টাকার ভাড়া এখন ২০০০ টাকা দিয়ে যেতে হইবে। এর থেকে কষ্টের আর কী আছে! আমরা অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিচ্ছি। এসব বিষয় প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখছে না। ফেরিতে যাত্রী পারাপার নিয়ে তাদের যত মাথা ব্যথা।’
বরিশালগামী যাত্রী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে অনেক কষ্টে ঘাট পর্যন্ত আসছি। ফেরিতে প্রচণ্ড ভিড়। সঙ্গে রোদ আর গরম। এর মধ্যে কি আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়? গরমে মাস্ক পরে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই মাস্ক খুলে ব্যাগে রেখেছি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাবাজার ট্রাকের টার্মিনালে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মনসুর আলী বলেন, ‘তিন ধরে ফেরিতে মানুষ পার করতাছে। আমার তো আর মানুষ নই। আমাগো তো আর ঈদ করা লাগে না। আমাগো তা পরিবার নাই। তাই আমাগো ঘাটে লোকজন কিছুই মনে করে না। তারা মন চাইলে পার করবে, না চাইলে আমাদের এভাবেই পড়ে থাকতে হবে। কেউ বলার নেই, দেখারও নাই।’
বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত দিন ধরে ঘাটে ঘরমুখী মানুষের ভিড়। ফেরিতে মানুষই পারাপার বেশি হচ্ছে। এপার থেকে ফেরিতে লোড নিচ্ছে না। এপারে আসা যানবাহনগুলো বিকল্প নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ব্যবহার করছে।’