আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - বিকাল ৩:৪৯

শেখ হাসিনাকে নয়, সেদিন গণতন্ত্রকে গ্রেফতার করেছিল

আজ শুক্রবার (১৬ জুলাই)। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস। এক-এগারোর সেনাসমর্থিত অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের এই ঘটনাকে দেশের গণতন্ত্রের ওপর বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। একটি অগণতান্ত্রিক সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করতেই সেদিন তাকে গ্রেফতার করেছিল বলে মনে করেন তিনি।বিজ্ঞাপন

এস এম কামাল হোসেন বলেন, সেদিন মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমানিত করা হয়েছিল। কারণ বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে সামরিক শাসকরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বুটের তলায় গণতন্ত্রকে পিষ্ট করেছিল। মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না। গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই শুরু করেছিলেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে সামরিক শাসকদের হাত থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছিল। তাকে যারা এক/এগারোর সময়ে গ্রেফতার করেছিল, তারা মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। তারা, গণতন্ত্রকে গ্রেফতার করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমানিত করেছিল— এটি পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে।

এস এম কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শেখ হাসিনাই একমাত্র সফল রাজনীতিবিদ যিনি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল একটি বাংলাদেশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠিয়ে এনেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও আজ সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা, মানবতা ও দেশপ্রেম দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে বিশ্বনেতাদের অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে আজ বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম তার অসামান্য অর্জন নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে নিয়ে গবেষণা করে। বিশ্বনেতারা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম মানবিক নেতা হলেন শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এই করোনা সংকটের মধ্যে যখন বিশ্ব নেতৃত্ব থমকে দাঁড়িয়েছেন, বিশ্ব নেতৃত্ব যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে, তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণ নেতৃত্ব দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে বাংলাদেশে করোনা মহামারি প্রতিরোধ করেছেন। একইসঙ্গে অর্থনীতির চাকা যেন মন্থর হয়ে না পড়ে, সেই ব্যবস্থাও নিয়েছেন তিনি। আজ একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশটাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর সে কারণেই আজ করোনার মধ্যেও পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেশি। করোনার মধ্যে যেখানে বেশিরভাগ দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক, সেখানেও বাংলাদেশ ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ দিন চলেছে সামরিক শাসন। দেশকে পেছনের দিকে, পাকিস্তানের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়াই ওই সময়কার শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন এস এম কামাল। আর সে কারণেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, সবসময় একটি অপশক্তি কিন্তু সক্রিয়, যারা বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নিতে চায়। তারা আগেও ছিল, এখনো আছে। সময়ের ব্যাবধানে তাদের প্রতিনিধি পরিবর্তন হয়। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য অভিন্ন। তারা জানে, বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চাইলে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করতে হবে, বঙ্গবন্ধুর রক্তকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। তাই আমরা মনে করি, সেদিন যারা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছিল তারা আবার বাংলাদেশটাকে সেই ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে ধারায় বাংলাদেশ ফিরে গিয়েছিল। শুধু ১৪ বছর আগের সেদিন নয়, আজও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে সেই অপশক্তি। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। বারবার সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে।

তবে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের স্বীকৃতি পাবে বলে বিশ্বাস করেন এস এম কামাল। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি করেছেন। পাবর্ত্য শান্তি চুক্তি করেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা এনে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর এখন বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন শেখ হাসিনা। আজ পদ্মাসেতু দৃশ্যমান, মেট্রোরেল হচ্ছে। সাবমেরিন, স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। ২০২২ সালে দৃশ্যমান মেগা প্রজেক্টগুলো শেষ হলে বাংলাদেশের চেহারা বদলে যাবে। বিশ্ব দরবারে যে কথাগুলো শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে, তার সেই কথা সত্য প্রমাণিত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের যে মহাযাত্রা শুরু হয়েছে, তা আরও দৃশ্যমান হবে।বিজ্ঞাপন

উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এস এম কামাল সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, যেখানে এক কোটির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনা যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন, সেই ইশতেহারে মূল স্বপ্ন ছিল ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়ন। সেই স্বপ্ন সামনে রেখে প্রতিবছর যে গণমুখী ও মানুষের স্বার্থের বাজেট দেওয়া হচ্ছে, এগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা পাবে।

তিনি বলেন, আজ গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। আজ গোটা বাংলাদেশ একটি শহরে রূপান্তরিত হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন বলেই ঘরে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পোঁছে গেছে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে। ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। অর্থাৎ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এই এশিয়া মহাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আমরা মনে করি, করোনা মহামারি না হলে বাংলাদেশের পক্ষে ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়া সম্ভব ছিল। তবে এখনো ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্যেকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, একইরকম ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও চলমান বলে মনে করেন এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এখনো সক্রিয়। তারা জানে, বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে, শেখ হাসিনা এগিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব হবে, স্বাধীনতার সুফল সব মানুষের ঘরে উঠবে। সেই যথার্থতা যেন প্রমাণ না হয়, সেটি দেখানোর জন্য তারা এখনো কাজ করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভুল ছিল— এটি প্রমাণ করার জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাগ্রাকে ব্যাহত করার জন্য আজও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির প্রতিনিধিরা দেশ-বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের একটাই কাজ— শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করা। অথচ আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। বাঙালি জাতি এটি ভরসার কারণ মনে করে যে তাদের একজন শেখ হাসিনা আছে, যিনি বাংলাদেশের মানুষের ভাষা বোঝেন, মানুষের চোখের ভাষা বোঝেন। তারা মনে করে, শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা যিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখান, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন।

এস এম কামাল হোসেন বলেন, এই দিনে যারা বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছিল, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গ্রেফতার করেছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমানিত করেছিল। আমরা সেদিনের সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাব, আসুন, সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

আরো সংবাদ