আজ - বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৭:৩৪

শেখ হাসিনার এক মহৌষধে সারবে দশ রোগ।

খান জাহান আলী ডেক্স : এক ঢিলে দুই পাখি মারার প্রবাদ বাঙালী জানে কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সিদ্ধান্তেই হলো দশটি সমস্যার সমাধান।

সিদ্ধান্তটি হলো গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর  ছিল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পর্যবেক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর এক সিদ্ধান্তেই হবে দশ সমস্যার সমাধান।শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তটি ছিল একটি কঠোর বার্তা। এটি দিয়ে শুধু ছাত্রলীগ অসুখের নিরাময় নয় বরং টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ এবং সরকারের মধ্যে নানারকম অসুখের জন্যও মহৌষধ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শেখ হাসিনার এমন সিদ্ধান্তে দলের ও সরকারের দশটি উপকার হলো।   

প্রথমত – এর মাধ্যমে ছাত্রলীগের টনক নড়বে। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব টেন্ডারবাণিজ্য, চাঁদাবাজি ইত্যাদি করার ক্ষেত্রে অন্তত দশবার চিন্তা করবে। শুধু কেন্দ্রে নয়, সারাদেশে ছাত্রলীগের মধ্যে একটি বার্তা যাবে যে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক যখন ছাটাই হয়ে যায় তখন অন্যদের ছাঁটাই করতে এক মুহুর্ত ভাববেন না শেখ হাসিনা। কাজেই ছাত্রলীগের যে বদনাম সেখান থেকে সরে আসার জন্য মরিয়া চেষ্টা করবে ছাত্রলীগ।

দ্বিতীয়ত – এমন সিদ্ধান্তে  প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের অঙ্গ সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোকেও একটি সতর্ক বার্তা দিলেন। এই ঘটনার ফলে অঙ্গ সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো সতর্ক হয়ে যাবে। কারণ ছাত্রলীগ হলো আওয়ামী লীগ সভাপতির সবচেয়ে প্রাণের সংগঠন। শেখ হাসিনার নিজের নির্বাচন করা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে নিজেই  ছাঁটাই করতে পারেন তাই অন্যদের ছাঁটাই করতে যে তাঁর বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে না নিঃসন্দেহে বলা যায়। ফলে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নরকম অভিযোগ এসেছে তাঁরাও সতর্ক হয়ে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে যেন অভিযোগ না ওঠে সে ব্যাপারে সজাগ থাকবে।

তৃতীয়ত – এর ফলে শুধু অঙ্গ সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো না, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সজাগ এবং সচেতন হয়ে যাবে। তারা মনে করবে যে, দুর্নীতি করলে, অনিয়ম করলে, সন্ত্রাস করলে, চাঁদাবাজি করলে শেখ হাসিনা যে নির্দয়ভাবে ব্যবস্থা নিবেন তাঁর প্রমাণ তিনি ইতিমধ্যে রেখেছেন। কাজেই এরফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে বিভিন্নরকম অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে উঠেছে সেই অভিযোগগুলো আস্তে আস্তে কমে যাবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত সতর্ক হয়ে যাবে।

চতুর্থত – এবারের মন্ত্রী এমপিদের অনেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নন। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও নন। অনেকেই মন্ত্রিত্ব পেয়ে দল এবং সংগঠনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল এমন অভিযোগ এসেছে। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে অনেকরকম অভিযোগ উঠেছে। শোভন রাব্বানীকে অব্যাহতি দেয়ার মাধ্যমে তাদের জন্য শেখ হাসিনা একটি বার্তা ছুড়ে দিলেন যে দেশ এবং রাষ্ট্রের কাছে কেউই অপরিহার্য নয়। কাজেই তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শেখ হাসিনা এতটুকু কার্পণ্য করবেন না।

পঞ্চম- টানা তৃতীয়বারের মত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমলাতন্ত্রের দাপট দৃশ্যমান। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই আমলারা সরকার পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্রে এসেছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন যে, আমলাদেরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। আমলাদেরকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। দলের জন্য দেশের জন্য কাজ করতে হবে। তারপরও অনেক আমলার বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। বিশেষ করে বালিশ কেলেঙ্কারি, কম্বল কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ঘটনার পর আমলাতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে শোভন-রাব্বানীর অব্যাহতি একটি মহৌষধ হিসেবে কাজ করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ষষ্ঠ – এমন সিদ্ধান্তে শুধু আওয়ামী লীগ এবং অন্য সহযোগী সংগঠনে শুদ্ধি নয় বরং রাজনীতিতে একটি পরিষ্কার বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা। অনিয়ম দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে সুস্থধারার রাজনীতির সুস্থধারার রাজনীতির যে কোনো সম্পর্ক নেই, সে বার্তাটি তিনি সুস্পষ্ট করলেন। এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এবং তার প্রতি জনগণের আস্থা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেলো। এটি শেখ হাসিনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলো। রাষ্ট্রের এবং জনগণের প্রয়োজনে তার যেকোনো সিদ্ধান্ত বিরোধীদল প্রতিবাদ করলেও জনগণ এটা বুঝতে পারবে যে জনস্বার্থেই তিনি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

সপ্তম – এটি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। যদি রাজনীতি করতে হয় তাহলে সুস্থ এবং আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করবে। বাংলাদেশে রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলই করে না। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদলসহ বিএনপির বিরুদ্ধেও এরকম একাধিক অভিযোগ, অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলই করে না। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদলসহ বিএনপির বিরুদ্ধেও এরকম একাধিক অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে কমিটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিরোধ,সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, চাঁদাবাজির বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনা তার নিজের দলের মধ্যে শুদ্ধিঅভিযান করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষ করে বিএনপিতে একটি বার্তা দিলেন যে রাজনীতি করতে গেলে সুস্থ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করতে হবে। অনিয়মতান্ত্রিক এবং বিশৃঙ্খলভাবে রাজনীতি করলে সেই রাজনীতি গ্রহণযোগ্য হবে না।

অষ্টম – শেখ হাসিনা যে বার বার বলছেন যে তিনি দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজির মতো বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় দেন না, তিনি আদর্শের রাজনীতি করেন এবং সেই আদর্শ হলো জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ। শোভন এবং রাব্বানীকে ছাটাই করার মাধ্যমে তিনি এই আদর্শটি তিনি প্রমাণ করলেন যে তিনি যেটা বিশ্বাস করেন সেটাই করে দেখান। শেখ হাসিনার একটি বড় শক্তি হলো তার আদর্শ এবং ন্যায়নীতি। শেখ হাসিনা যে একজন ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে তিনি তা আরেকবার প্রমাণ করলেন।

নবম – শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়ে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করলেন যে, রাজনীতিতে কেউই অপরিহার্য নয়। বরং যারাই জনগণের প্রতিপক্ষ হবে তারাই গণশত্রুতে পরিণত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা একজন সরকার প্রধানের নৈতিক দায়িত্ব। শেখ হাসিনা শোভন-রাব্বানীকে ছাটাই করে এটাই প্রমাণ করলেন যে কেউই অপরিহার্য নয়।

দশম- শেখ হাসিনা এই ঘটনার মাধ্যমে এই বার্তা দিলেন যে, এতদিন ধরে যেটা বলা হতো যে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজরা সরকারের মদদে আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লালিতপালিত হয়- জনগণের সেই ভুল ধারণাটি ভেঙে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যসময়ে কি হয়েছে না হয়েছে সেটি অন্য বিষয়। কিন্তু শেখ হাসিনা কখনোই এসব বিষয়কে কখনো প্রশ্রয় দেন না। সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আপনাআপনি কমে যাবে তা বলাই বাহুল্য।

অর্থাৎ, শেখ হাসিনার প্রয়োগকৃত এই মহাষৌধ একটি রোগে প্রয়োগের বিপরীতে ১০টি রোগ সারাবেন।

আরো সংবাদ