আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৬:৩৫

সন্ত্রাসী জুয়েলের আস্তানা গুড়িয়ে দিল বুলডোজার – ৯ জনের বিরূদ্ধে পুলিশের মামলা।


স্টাফ রিপোর্টার : যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শীর্ষসন্ত্রাসী অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী কাজী তৌহিদুর রহমান জুয়েল ওরফে কাজী জুয়েলের আস্তানা যশোর শহরতলীর শেখহাটি এলাকার “কাজী ছাত্রাবাস” বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে । স্থানীয়রা জানান গতকাল বৃহস্পতিবার রাত বারটায় বুলডোজার দিয়ে মেসটি গুড়িয়ে দেয়া হয় এসময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। তবে কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামানের দাবি কাজী ছাত্রাবাসটি বেশ আলোচিত। এলাকাবাসী ওই মেস ভাঙচুর করেছে। ছাত্রদের ওই মেস থেকে অন্য মেসে চলে যেতে বলেছে। পরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।


ওসি আরও বলেন ওই মেসে এমন কোনো অপরাধ নেই যে হয় না। মেসের ছাত্রদের জিম্মি করে নানা অপকর্ম করা হয়। একটি মামলার পলাতক আসামি আটক করতে গিয়ে ওই মেসে গোলাবারুদ, মাদক ও অস্ত্রের সন্ধান পায় পুলিশ। মেস মালিক কাজী আলম, তার ছেলে কাজী জুয়েলসহ ৬জন পলাতক রয়েছে।


এর আগে গেল মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে যশোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানির নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে কাজী ছাত্রাবাস থেকে ওয়ান স্যুটারগান , পিস্তল, গুলি, ধারালো অস্ত্র, বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম, লোহার রড, মাদকদ্রব্য, ইয়াবা, বীর্যভর্তি কনডম, জন্মনিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন উপকরণসহ দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে ওই কক্ষ ব্যবহারকারী যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের তিন শিক্ষার্থীকে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুড়া খারাটির রফিকুল ইসলামের ছেলে আবু হেনা, মেহেরপুর মুজিব নগর থানার আনন্দবাসের রফিকুল ইসলামের ছেলে তৌফিক ইসলাম ও একই উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের ওসমান বিশ্বাসের ছেলে রাফিউন ইসলামকে আটক করা হয়।


এসময় যশোর জেলা আ’লীগের সাবেক সদস্য কাজী আলমের ছেলে হাফ ডজন মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী কাজী জুয়েল, শেখহাটি তমালতলা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী বক্কার, শেখহাটি বিশ্বাস পাড়ার হোসেন আলীর ছেলে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী কালা আরিফ, নাভারন ইউনিয়ন আ’লীগের সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য কাশেম শিকদারের ছেলে যশোর পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ইমরান শিকদার, ছোট শেখহাটির নওয়াব আলী সর্দারের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী টিপু সর্দার পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি উপশহর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই এইচএমএ লতিফ অস্ত্র বিস্ফোরক ও মাদক আইনে পৃথক তিনটি মামলা করেছেন। মামলায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুড়াখারআটি গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আবু হেনা রোকন (২০), মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে তৌফিক ইসলাম (১৯), ওসমান বিশ্বাসের ছেলে রাফিউন ইসলাম (১৯), যশোর শহরতলীর শেখহাটি লিচুবাগান এলাকার মৃত আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে এবং কাজী ছাত্রাবাসের মালিক কাজী আলমগীর হোসেন আলম (৫৫), কাজী আলমের ছেলে কাজী জুয়েল (৩৫), শার্শা উপজেলার নাভারণ বাজার এলাকার কাশেম শিকদারের ছেলে ইমরান শিকদার (২৫), যশোর শহরতলীর শেখহাটি কালীতলা এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে রানা (৩০), শেখহাটি বিশ্বাস পাড়ার হোসেন আলীর ছেলে আরিফ ওরফে কালো আরিফ (২৬) এবং মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে রায়হান (৩০) কে আসামি করা হয়েছে।


মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোর শহরের দড়াটানায় এক যুবক ছুরিকাঘাতের শিকার হয়। ওই ঘটনায় কোতয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার পলাতক আসামি আটক করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার কাজী ছাত্রাবাস নামক মেসে অস্ত্র ও মাদক লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ২৫ ফেব্রæয়ারি দিবাগত রাত একটার দিকে ওই মেসে অভিযান চালিয়ে আসামি রোকন তৌফিক ও রাফিউনকে আটক করা হয়। পরে তাদের ঘর তল্লাশি করে একটি শর্টগান, একটি ওয়ান স্যুটারগান, ৫টি ককটেল, ৩ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, ৪টি বার্মিজ চাকু, ৩টি দা, ১৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, এক কেজি গাঁজা, ৬ বোতল বিদেশি মদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং দুইটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। তাদের কাছ থেকে পলাতক আসামিদের নাম পরিচয় জানা যায়।


অন্যদিকে এই মামলায় আটক তিন আসামি বৃহস্পতিবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা আদালতকে জানিয়েছে, ঘটনার রাতে জুয়েল, কালো আরিফ, ইমরান ও আব্দুল্লাহ ওই মেসে তাদের রুমে ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। অস্ত্র গুলো তাদের বলে তারা আদালতকে জানিয়েছে।

মেস মালিক কাজী জুয়েলের মা শিরিন আক্তার জানিয়েছেন, মেস কোন মানুষ ভাঙচুর করেনি। পুলিশ ভাঙচুর করেছে। ওই মেসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা থেকে লেখাপড়া করে। কাজী আলম মাঝেমধ্যে যান দেখভাল করার জন্য। সেখানে কোন মাদক, অস্ত্র ছিলো না। পুলিশ কীভাবে সেখান থেকে ওইগুলো পেলো তা আমার জানা নেই। এই সব ষড়যন্ত্র বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, কাজী আলমগীর হোসেন আলম রাজনীতি করেন। তিনি আগামী ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসাতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এই ঘটনা তারই অংশ।

আরো সংবাদ