কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর এখন কথা বলার কোনো সঙ্গী নেই।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলেছে। বৃহস্পতিবার ৯ম শ্রেণিতে শুধু নার্গিস নাহার ক্লাসে আসেন। দিনটি তার কেটেছে খারাপ লাগার মধ্য দিয়ে।
নার্গিস বলেন এখন শুধু আমিই বাকি রয়েছি। ক্লাসজুড়ে আমি শুধু একা। কারো সাথে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারি না। তাই মন খারাপ করেই ক্লাস করতে হচ্ছে।”
বান্ধবীদের বিয়ের কথা জানতে পেরে নিজের মধ্যেও শঙ্কা কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার শেষ পরিণতি কী হবে তাও অজানা। আমি আমার বাবা-মাকে অনুরোধ করেছি। আমাকে যেন হঠাৎ করে বিয়ে না দেয়। আমি পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি করে নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করব। এর আগে নয়। অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।”
সরেজমিন সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ৯ম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস নাহার ক্লাস করছেন। এক পাশে ছাত্ররা এবং অন্য পাশে নার্গিস একা।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলে রহমান বলেন, তার বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ছাত্রী এবং ৭০ শতাংশ ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে। বাকিদের খোঁজ খবর নিতে শিক্ষকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যালয়ে না আসার প্রকৃত কারণ তুলে ধরবেন। প্রাথমিক তথ্য মতে স্কুলের ১৮ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির চার জন ছাত্রীর মধ্যে জেসমিন ছাড়া বাকি তিন জনেরই বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। ৯ম শ্রেণিতে নয় জনের মধ্যে নার্গিস ছাড়া আট জনের বিয়ে হয়েছে।”
এছাড়াও ষষ্ঠ শ্রেণির একজন, সপ্তম শ্রেণির দুজন, অষ্টম শ্রেণির চার জনের বাল্যবিয়ে পরিবার থেকে গোপনে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফজলে রহমান।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ চৌধুরী বলেন, “৯ম শ্রেণিতে ৩৬ জন ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে ৯ জন ছাত্রী আর ২৭ জন ছাত্র। স্কুল খোলার পর বাল্য বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। তারপরেও আমরা মেয়েদের পড়ালেখামুখী করার চেষ্টা করছি।”