করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার। বুধবার ভোর থেকে এই কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। ভোরে রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ।
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এসব চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় এবং রাস্তার বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হচ্ছে।
যেসব পেশার মানুষ জরুরিসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের চেকপোস্ট অতিক্রম করার অনুমতি দিয়ে অন্যদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেক রাস্তাতে বেরিকেড বসিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেসব রাস্তায় জরুরিসেবা সংস্থারও কোনো যানবাহন যেতে পারছে না; যেতে হচ্ছে বিকল্প রাস্তায়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বুধবার থেকে কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এজন্য ‘মুভমেন্ট পাস’ ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে আসতে দেওয়া হবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বুধবার থেকে কঠোর বিধিনিষধের ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু এই বিধিনিষেধকে বলা হচ্ছে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। বুধবার ভোর ৬টা থেকে আগামী ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সাতদিন এ বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। তবে গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানা এবং ব্যাংক খোলা রয়েছে এ থেকে।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময়ে জরুরিসেবা ও শিল্প-কলকারখানা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। শিল্প-কলকারখানা কর্তৃপক্ষকে কর্মীদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় আনা-নেওয়া করতে হবে। সর্বাত্মক লকডাউনে সংবাদপত্রসহ অন্যান্য জরুরি, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবাসংশ্নিষ্ট অফিস, তাদের কর্মী এবং যানবাহন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। অর্থাৎ গণমাধ্যমের (সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) কর্মীদের কাজ ও চলাচল অব্যাহত থাকবে। এছাড়া সংবাদপত্র এজেন্ট, হকার ও সংবাদপত্র পরিবহনও এই সর্বাত্মক লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে। সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন লকডাউনের সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দেবে।
সরকারি বিধিনিষেধের কঠোর বাস্তবায়ন চেয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে এই নির্দেশনা পালনে আগের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি বন্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, লকডাউনের আগের দিন যেভাবে মানুষ গ্রামে ফিরেছে, তাতে সংক্রমণ আরও বাড়বে। মানুষের বাড়ি ফেরা আটকাতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ করে তারা বলেছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও হাজার হাজার মানুষ যেভাবে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরেছেন, তা দেখে মনে হয়, বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। গ্রামে ফেরা অনেকে সংক্রমিত থাকতে পারেন। তারা গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও এলাকায় অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন।
সরকার মনে করছে, করোনার সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ কার্যকর করার বিকল্প নেই। এরই অংশ হিসেবে সড়কে চলাচলের জন্য মুভমেন্ট পাস চালু করা হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে পাস না পাওয়া পর্যন্ত কেউ সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহনেও চলাচল করতে পারবেন না।