আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৬:৩৮

সস্পর্কে ফাঁটল! বিএনপির কাছে ১২০ কোটি টাকা ফেরত চায় জামাত!

নাজমুল হক: বিএনপির সঙ্গে জামাতের সম্পর্ক যতটা না আদর্শিক, তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি এবং জামাতের সম্পর্কের টানাপোড়নের মধ্যে তাদের অর্থনৈতিক যোগসূত্রের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। জামাত তার নীতি নির্ধারনী সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিএনপি যদি জামাত থেকে আলাদা হয় তাহলে তারা ১২০ কোটি টাকা ফেরত চাইবে। যে অর্থ অতীতে জামাত বিএনপিকে দিয়েছিল। বিএনপির সঙ্গে ১৯৯৬ এর পর থেকে জামাতের ঐক্য গড়ে উঠেছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইসলামী দেশগুলো এবং পাকিস্তানের কাছ থেকে যে অর্থগুলো বাংলাদেশে আসে সেই অর্থের মূল বাহক জামাত। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য এই সমস্ত অর্থ জামাত সংগ্রহ করে বিএনপিকে দিত। যখন বিএনপির একটি অংশ জামাত থেকে আলাদা হতে চাইছে, তখন জামাত মনে ভিন্ন চিন্তা। জামাত যে অর্থগুলো বিএনপিকে দিয়েছিল তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, নির্বাচন পরিচালনার জন্য, সেই অর্থগুলো বিএনপির ফেরত দিতে হবে। জামাতের সর্বশেষ বৈঠকে, যেখানে ২০ দলের ভবিষ্যৎ এবং বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। সেখানে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা চমকপ্রদ। সেই তথ্যে দেখা গেছে যে, এবারের নির্বাচনের জন্যও জামাত বিএনপিকে টাকা দিয়েছে। এই টাকা পাকিস্তান থেকে লন্ডনে গিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এবারের নির্বাচনে জামাতের ২২ জনকে ধানেরশীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। জানা যায় যে, কোন জনপ্রিয়তা বা জামাতের প্রতি কোন ভালোবাসার জন্য নয়। এই অর্থের বিনিময়ে জামাত ২২ টি মনোনয়ন কিনেছিল। এই টাকা লন্ডনে পরিশোধ করা হয়েছিল। ‘জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ’ যদিও তাদের নাম পরিবর্তন করেছে। কিন্তু এটি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এফবিআইর মতামত অনুযায়ী জামাত হলো আন্তর্জাতিক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। পাকিস্তান বা অন্যান্য দেশের জামায়াত ইসলামের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে। এবং একই আদর্শ নিয়ে তারা পরিচালিত হয়। সেইজন্য বাংলাদেশে সংগঠন পরিচালনা, নির্বাচনসহ অন্যান্য তৎপরতার জন্য জামাত আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে অর্থ পায়। কিছুদিন আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে জামাতের অর্থ পাওয়া ছিল একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এই সমস্ত অর্থের একটি বড় অংশ জামাত দিত বিএনপিকে।
এবারের নির্বাচনই শুধু নয়, বিভিন্ন সময়ে জামাত যে অর্থ দিয়েছে সে সমস্ত নিয়ে জামাতের নীতি নির্ধারক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয় তখন সে আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে টাকা দিয়েছিল জামাত। কথা ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া ২০ দল নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে আন্দোলন করবে। সেই প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়া বেশ কিছু জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু পরে জনমতের চাপে বেগম খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেওয়া হয় এ নিয়ে যেন তারা তেমন কথাবার্তা না বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে বিএনপির নিশ্চুপ থাকার একটি বড় কারণ ছিল অর্থপ্রাপ্তি।
২০০১ সালে জামাতের দুজন মন্ত্রী হন। এরা হলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদ। এ দুজনকেই মন্ত্রী করার জন্য জামাত তৎকালীন সময়ে বিএনপিকে অর্থ দিয়েছিল বলে ওই বৈঠকে উঠে এসেছে।
১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি এবং জামাতের সম্পর্কের টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বিএনপিই জামাতের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কারণ জামাত যখন বিএনপি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল, তখন বিএনপির মধ্যপ্রাচ্যসহ পাকিস্তান থেকে বিএনপির একার পক্ষে অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্যই মূলত আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহের জন্য জামাতের সঙ্গে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরে চারদলীয় জোট গঠন করা হয় এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। ঐ নির্বাচনেও পাকিস্তানের আইএসআই বিএনপিকে যে বিপুল পরিমাণের টাকা দিয়েছিল, তা জামাতের মাধ্যমেই দিয়েছিল। জামাত তাদের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারনের সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , যদি জামাত আলদা হয় বিএনপি থেকে, তাহলে বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং নির্বাচনের জন্য যে অর্থ দিয়েছিল সে অর্থগুলো ফেরত দিবে। প্রাথমিক হিসেবে দেখা গেছে, অর্থের পরিমাণ ১২০কোটি টাকার কাছাকাছি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, মূলত আর্থিক কারণেই তারেক জিয়া জামাত থেকে আলাদা হতে চান না। ২০ দলকে নিয়েই তিনি রাজনীতি করতে চান। কিন্তু জামাত বিএনপির সঙ্গে থাকায় শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও অশ্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপিকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে বিএনপির সঙ্গে জামাতের সখ্যতা থাকলে বা সম্পর্ক থাকলে বিএনপিকেও তারা একটি মৌলবাদী দক্ষিনপন্থী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করবে। সে হিসেবে বিএনপির সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি আদায় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পরবে। সেই বিবেচনা থেকেই বিএনপি যখন জামাত থেকে আলাদা হতে চাইছে, তখন তাদের অর্থনৈতিক ভাগ বাটোয়ারার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত