ইউসুফ দফাদার নামে এক বিএনপি কর্মীকে বিচার বহির্ভুত হত্যার অভিযোগে মণিরামপুরের সাবেক এমপি ইয়াকুব আলী, যশোরের সাবেক এসপি ও বর্তমানে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, মণিরামপুর থানার তৎকালীন ওসি, এসআই ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। রোববার নিহত ইউসুফের মেয়ে রেবেকা বেগম এ মামলা করেছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটি পুলিশের আইজিপিকে (ঢাকা) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
অপর আসমিরা হলো, মণিরামপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্যা খবির আহমেদ, এসআই শহিন, এসআই হিরনম্ময়, দত্তকোনা গ্রামের মৃত হাতেম আলী মালীর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মাহামুদুল হাসান, আগরহাটি গ্রামের জবেদ আলী সরদারের ছেলে কামরুজ্জামান কামিয়ার, মোহনপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন, মণিরামপুরের মৃত সুভাষ ঘোষের ছেলে সন্দীপ ঘোষ, মৃত অনিল ঘোষের ছেলে বাপ্পি ঘোষ, দূর্গাপুর গ্রামের মৃত আব্দুর জব্বারের ছেলে আদম আলী, দত্তকোনা গ্রামের কাজী মাহামুদুল হাসানের ছেলে কাজী মাহমুদ পারভেজ, কামালপুর গ্রামের মৃত দূর্গাপদ ঠাকুরের ছেলে মহিতোষ ঠাকুর, দূর্গাপুর গ্রামের মনিক সরদারের ছেলে আমজাদ হোসেন, হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মাহাবুর রহমান, রতনদিয়া গ্রামের আবুল শেখের ছেলে লতিফ শেখ, গরীবপুর গ্রামের মৃত শফি কামালের ছেলে হারুন অর রশিদ সেলিম ও মোবারকপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে ইমরান খানা পান্না।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, মণিরামপুর তাহেরপুর গ্রামের ইউসুফ দফাদার বিএনপির কর্মী ছিলেন। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইউসুফ ও দূর্গাপুর গ্রামের লিটন মোটরসাইকেল যোগে মণিরাপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মণিরামপুর ডিগ্রি কলেজ মোড়ে ট্রাকে আগুন দেখে তারা পার্শবর্তী জালঝাড়া বৌ বাজারে গিয়ে একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের ধরে পুলিশে সংবাদ দেয়। তৎকালীন পুলিশ সুপারের নির্দেশে মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ওই দুই এসআই বৌ-বাজারে গিয়ে ইউসুফ ও লিটনকে ধরে নিয়ে যায়। ইউসুফ ও লিটনকে আটকের সংবাদ পেয়ে স্বজনেরা থানায় যেয়ে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ওসি মোল্যা খবির আহম্মেদের সাথে দেখা করেন। মোল্যা খবির আহম্মেদ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে দেখা করতে বলেন তাদের। স্বজনেরা আওয়ামী লীগে নেতাদের সাথে দেখা করলে তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হবে বলে জানিয়ে দেয়।
রাতের মধ্যে টাকা যোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে পরদিন সকালে থানায় যেয়ে স্বজনেরা জানতে পারেন ইউসুফ ও লিটনকে যশোর নিয়ে গেছে। স্বজনেরা দ্রুত যশোর গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে খোঁজ নিয়ে ইউসুফ ও লিটনকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতাল মর্গে যেয়ে তাদের লাশ পান।
পুলিশ জানিয়েছিল তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। খোঁজ নিয়ে ওই দুই জনের স্বজনেরা জানতে পারেন ইউসুফ ও লিটনকে মণিরামপুরের বেগারিতলার ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুতলহাল প্রস্তুত করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় হত্যা মামলা করা হয়েছে।