শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, এখন থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারপ্রাইজ ভিজিট চলবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনও অবহেলা পেলে প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিংয়ে একথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা ও ডেঙ্গু থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে গিয়ে কোনও অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আজ এখানে জানিয়ে এসেছি। তবে প্রায়শই না জানিয়ে সব জায়গায় যাবো। কোথাও যদি কোনও নিয়মের ব্যত্যয় দেখি, তাহলে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবেন— শিক্ষক বা অধিদফতরের কর্মকর্তা যে-ই হোন; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘাটতি পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেওয়া হবে। এ ছাড়া অবস্থা আরও ভালো হলে জেএসসি পরীক্ষাও হবে।
দীপু মনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সবার সচেতনতা একরকম নয়। যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবেন, তাদের একটু সচেতন থাকতে হবে। স্কুলের প্রতিটা আনাচে-কানাচে খুঁজে দেখতে হবে। কোথাও যেন ময়লা না থাকে। যতটা ভালো পারা যায়, আমরা চেষ্টা করছি।
তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য প্রত্যেক জেলায় একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। পরে এর নম্বরগুলো প্রচার করা হবে। যে কেউ এসব নম্বরে ফোন করে যদি জানান, যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনও রকম সমস্যা আছে; আমরা তা সমাধানে ব্যবস্থা নেবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এক সপ্তাহে সংক্রমণ সাতে নেমে এসেছে। আমরা গত ২৬ আগস্ট যখন বৈঠক করেছি, তখনই সংক্রমণের হারে যে নিম্নগামী ট্রেন্ড দেখেছিলাম; সেটার ওপর ভিত্তি করে ধরে নিয়েছিলাম ১১ সেপ্টেম্বরে মধ্যে সংক্রমণের হার পাঁচ না হোক কাছাকাছি নেমে আসবে। তার ভিত্তিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিই। শুধু তাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের সামাজিক-মানসিক সমস্যা হচ্ছিল। এটাও ঠিক যে, করোনার সঙ্গে আমাদের অনেক দিন বসবাস করতে হবে। সে কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আমরা এই সময়টাকে মনে করেছি যথার্থ।’
সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে না নিয়ে অনলাইনে পাঠদান এবং অ্যাসাইনমেন্টে ফিরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি কোনও আশঙ্কা দেখা যায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার, সেক্ষেত্রে আমাদের তো সুযোগ রয়েছে শ্রেণিকক্ষে না রাখার। সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, সবার মাঝে একটা সাজসাজ রব আছে। একইসঙ্গে শত শত ম্যাসেজ, ই-মেইল আমার কাছে এসেছে; ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবেন না’।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে এখন শুধু করোনা নয়, ডেঙ্গুর সিজনও চলছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল থেকেই থাকবে। এই সময় ডেঙ্গু মশার কামড় ভয়াবহ। সে কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—পুরো হাতা জামা, ফুল প্যান্ট বা পায়জামা যেন পরে আসে। অভিভাবকদেরও সেটা বলবো। এর কারণে যদি ফুল ইউনিফর্ম নাও হয়, গোড়ার দিকে যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে; ততদিন ডেঙ্গু থেকেও শিক্ষার্থীদের বাঁচিয়ে রাখাটা আমাদের দায়িত্ব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ওপর এই সময় কড়াকড়ি না করাই ভালো। আবার অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা গত দেড় বছরে অনেক বড় হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে সব অভিভাবকের পক্ষে স্কুল ইউনিফর্ম হয়তো এখনই তৈরি করে দেওয়া নাও সম্ভব হতে পারে। সে কারণে প্রথমে কিছুটা তো ছাড় দিতেই হবে।’
অভিভাবকদের জটলা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখানেও দেখলাম। আমরা প্রতিদিনের চেকলিস্ট করে দিয়েছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চেকলিস্ট করে প্রতিবেদন বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের কাছে পাঠাবে, এটা বাধ্যতামূলক। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা, সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য লোকজন আছেন; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের বিঘ্ন না করে সবাই মিলে তদারকি করতে হবে যেন অভিভাবকরা ভিড় না করেন। এ ছাড়া প্রত্যেক জেলায় আমাদের একটি কন্ট্রোল রুম আছে। এগুলো প্রচারও করা হবে। যে কেউ যদি বলেন, এই স্কুলে-মাদ্রাসায় এই সমস্যা আছে তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে। মধ্য অক্টোবরে খোলার কথা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বৈঠক করবো, করতে পারিনি। এই সপ্তাহের মধ্যে করে ফেলবো। তাদের কাছে জানতে চাইবো যে স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো আগে খুলতে পারেন কিনা। আবাসিক শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়েছেন। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের এক ডোজ টিকা দিয়ে তারা খুলে দিতে চান। কথা বলবো, সিদ্ধান্ত তাদের।’
তিনি বলেন, ১২ বছরের ওপরে একটি মাত্র টিকার সব জায়গায় অনুমোদন রয়েছে। সেই টিকা আমাদের দেশে কিছু আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও নিয়ে আসার কথা বলেছেন। এই টিকা দেওয়ার বিষয়ে কারিগরি একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য টিকার চেয়ে একটু কঠিন গ্রামাঞ্চলে দেওয়া। এই টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে খুলে ফেললে ছয় ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয়। কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে কোথায় দেওয়া যাবে। সেটি শহরেই শুরু করতে হবে। আমরা টিকা পাওয়া সাপেক্ষ শুরু করবো পর্যায়ক্রমে।
টিউশন ফি আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মাসিক বেতন তারা নিতে পারবে। সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে কী কী নেওয়া যাবে। তারা নিতে পারবে। যদি কোনও শিক্ষার্থীর পারিবারিকভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে, সেক্ষেত্রে তাদের কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা বা অন্য কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যায়। যেসব শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে পড়ছে তাদের ওপর তো প্রতিষ্ঠান অমানবিক হতে পারে না। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের বেতনের ওপর নির্ভর করে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠান চালায়। কাজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছুটা হলেও আদায় করতে হবে। সবার কাছে আবেদন করবো, মানবিক কারণে একটি যুক্তিসঙ্গত জায়গায় আমরা পৌঁছাই।’
এর আগে সকালে পরিদর্শনকালে শ্রেণিকক্ষ অপরিচ্ছন্ন রাখায় আজিমপুর গভর্নমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেই সঙ্গে সেই অধ্যক্ষের নেতৃত্বে গঠিত মনিটরিং কমিটির সদস্য শিক্ষকদেরও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।