আজ - শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, (গ্রীষ্মকাল), সময় - রাত ৮:২৯

সিরিয়ার ক্যাম্পে শেকলে বাঁধা ‌ক্ষুধার্ত শিশুর মৃত্যু

সিরীয় শিশু আইলান কুর্দির কথা নিশ্চয় আমাদের মনে আছে। গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে এই কুর্দি পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছিল তুরস্কে। সেখান থেকে গ্রিসের কস্ দ্বীপে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে আইলান মারা যায়। আইলানের নিথর দেহ ভেসে আসে সৈকতে।

তুরস্কের উপকূলে পাঁচ বছর বয়সী এই শিশুর মরদেহ পড়ে থাকার ছবি বিশ্বজুড়ে তীব্র আলোড়ন তুলেছিল। 

সিরিয়ার ভেতরের সংকট কতটা গভীর তা এই ছবিটিই জানান দিয়েছিল, কাঁদিয়েছিল বিশ্ব মানবতাকে। আইলান কুর্দির মতো আবারও এক ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়।

সিরিয়ার বাস্তুচ্যুতদের এক ক্যাম্পে ছয় বছর বয়সী নাহলা আল ওথম্যানের ছবি ঘুরছে নেট দুনিয়ায়। ছবিতে দেখা গেছে, বাদামী চুলের নাহলা ময়লা কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার ছোট্ট হাত দুটো বাঁধ শেকলে। এই শরণার্থী ক্যাম্পেই মৃত্যু হয় নাহলার। ছবিটি সে মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে তোলা। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার ফারজাল্লাহ ক্যাম্পে জীবনের শেষ দিনগুলো বাবা এবং সহোদরদের সঙ্গে কেটেছে নাহলার। ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরে বেড়াত নাহলা। আর তা ঠেকাতে তার বাবা প্রায়ই তাকে শিকলে বেঁধে কিংবা খাঁচায় আটকে রাখতেন। এই অবস্থায় তোলা তার একটি ছবি নেট দুনিয়ায় তোলপাড় ফেলেছে। 

ক্যাম্পটির সুপারভাইজার হিসাম আলি ওমর বলেন, সারা ক্যাম্পে ঘুরে বেড়ানো আটকাতে নাহলার বাবা তার হাত কিংবা পা শিকলে বেঁধে রাখতেন। আমরা অনেকবার তাকে শিকল খুলে দিতে কিংবা খাঁচায় আটকে না রাখতে বলেছি, কিন্তু তিনি প্রত্যেকবারই অস্বীকার করেছেন।

এই ক্যাম্পেই মে মাসে নাহলার মারা যায়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় দ্রুত খাওয়ার সময় মারা যায় শিশুটি। 

তার মৃত্যুর পর শিকলে বাঁধা ছবিটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে। চাপের মুখে তার বাবাকে আটক করতে বাধ্য হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

সিরিয়ার লাখ লাখ শিশুর দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি ছোট্ট নাহলা। গৃহযুদ্ধ আর সহিংসতার কবলে পড়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া এই ধরনের লাখ লাখ শিশু সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষুধা আর শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত এসব শিশু চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হয়ে বেঁচে থাকতে প্রতিদিন লড়াই করছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে অনেক শিশু। তবে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কোনো সংস্থার কাছেই নেই।

দাতব্য গোষ্ঠী সেভ দ্য চিলড্রেনের মুখপাত্র আহমাদ বায়রাম বলেন, আমরা সেসব শিশুকে নিয়ে কথা বলছি যাদের জন্ম তাঁবুতে। তারা স্বাভাবিক জীবন কেমন হয় তা ভুলে গেছে।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ৪২ লাখ বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধের সময় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। আশ্রয় নিয়েছে অস্থায়ী এসব ক্যাম্পে। 

দাতব্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, ক্যাম্পগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে উঠছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। অনেক শিশুই পরিবারকে সহায়তা দিতে কাজ করছে আর অপুষ্টির হার দিন দিন বাড়ছে।

উত্তর সিরিয়ায় শিশু এবং অল্প বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে বলেও জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন।

আরো সংবাদ