চট্টগ্রামে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিরোধ, তারই জের ধরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের ভাগ্নে ইফতেখার আলম সৌরভকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। ৯ জুন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার আফমি প্লাজার সামনে থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। নিখোঁজ সৌরভ নগরের পাঁচলাইশ থানার নাজিরপাড়া সিটি ভিউ আবাসিক এলাকার সৈয়দ মো. ইদ্রিস আলমের ছেলে। তিনি সোহেল তাজের আপন মামাতো বোনের ছেলে। এ ঘটনায় পরদিন পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করা হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি এখনও। অপহৃত সৌরভের পরিবারের অভিযোগ, আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ নামে প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর যোগসাজশে এ অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, সোহেল তাজ ফেসবুক পোস্টে অপহরণকারীদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে তার ভাগ্নেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। অন্যথায় তাদের পরিচয় জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। সোহেল তাজ এও লিখেছেন- এ ঘটনার আড়ালে কারা আছেন, তা জানা আছে।
সৌরভের পারিবারিক সূত্র খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে জানায়, ২০১৭ সালে ব্যবসায়ী আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ ওরফে সালেহ আজাদের মেয়ের সঙ্গে ফোনে পরিচয় হয় সৌরভের। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের বিষয়টি মেয়ের পরিবার মেনে না নেওয়ায় দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় ওই মেয়ের। বিয়ের পরও তার মেয়ের সঙ্গে সৌরভের যোগাযোগ রয়েছে অভিযোগ তুলে হুমকি-ধমকি দিতেন সালেহ আজাদ। সৌরভের পরিবারকেও বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় একটি দপ্তরে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর ওই দপ্তর থেকে ছাড়া পান তিনি। একদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে বনানী থানার ওসি সৌরভকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নাজেহাল করেন বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। সৌরভকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে পুলিশ ইচ্ছেমতো মুচলেকা নেয় বলেও অভিযোগ করছেন তারা। পরে বনানী থানার এক এসআইকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় ব্যবসায়ী সালেহ আজাদকে তার ব্যবসায়িক পার্টনার ওমর ফারুককে নিয়ে বনানী থানায় ঢুকতে দেখেন সৌরভ। পাঁচ/সাত দিন পর একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়ে দু’জন বনানী এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সৌরভ ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তারাও একই প্রসঙ্গে জানতে চান। পরে বনানী থানা যুবলীগের নেতা পরিচয়ে ইব্রাহিম নামের একজন সৌরভকে হুমকি-ধমকি দেন।
সোহেল তাজের ফেসবুক স্ট্যাটাস
গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার রাতে সৌরভের বনানীর বাসা থেকে সাদা পোশাকে একদল লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় বাসার সিসিটিভি ফুটেজও নিয়ে যায় তারা। একটি কালো গাড়িতে তুলে তার চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে দেয়। একটি কক্ষে নিয়ে এক রাত রাখা হয় তাকে। এ সময় সৌরভকে ওই ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন রাতে তাকে বাসায় নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময় তাকে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভাঙিয়ে বেশ কয়েকবার সৌরভকে ফোন করা হয়। সর্বশেষ গত ৯ জুন তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়ে নগরের আফমি প্লাজার সামনে আসতে বলা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সৌরভ আফমি প্লাজার সামনে যাওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা।
সৌরভের বাবা সৈয়দ ইদ্রিস আলম খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন পরিচয়ে ব্যবসায়ী সালেহ আজাদের মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ছাড়া একবার র্যাব-১-এর পরিচয় দিয়ে তাকে তুলেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে গোয়েন্দা অফিসার পরিচয়ে সৌরভকে আইটি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি দেবে বলে বাসা থেকে আফমি প্লাজার সামনে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তার আর খোঁজ পাচ্ছি না।’
সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী সালেহ আজাদ চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে একাধিকবার সৌরভকে হয়রানি করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আমার ছেলের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে।’
সৌরভের বড় ভাই তানভীর শাহরিয়ার সম্রাট বলেন, ‘সৌরভ নিখোঁজের পরপর সালেহ আজাদ চৌধুরীকে ফোন করা হয়। তিনি বলেছিলেন, আমি দুই বছর ধরে তোমার ভাইয়ের অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি। একদিনের মধ্যে তোমরা অধৈর্য হয়ে পড়েছ। তোমাদের তো অনেক ক্ষমতা, এখন ভাইকে নিয়ে আসো।’
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী আবু সালেহ চৌধুরী আজাদ খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। সৌরভকে তিনি কখনও সরাসরি দেখেননি। এ বিষয়ে তাকে জড়িয়ে অভিযোগ করে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খতিয়ে দেখতে পারে। তবে তার মেয়ের সঙ্গে একসময় সৌরভের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে নগর পুলিশের উপকমিশনার বিজয় কুমার বসাক খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছি। যেসব বিষয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সৌরভের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
খানজাহান আলী 24/7 নিউজ / মুনতাসির মামুন ও শাখাওয়াত আলম ফিরোজ চট্টগ্রাম থেকে ফিরে।