স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে ১৪ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন ঝিনাইদহর আলোচিত মোহাম্মদ ইসলাম মৃধা। স্ত্রী ও ছেলেকে স্বীকৃতি না দেয়ায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ইসলাম মৃধা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মৃধার ছেলে।
শুক্রবার দুপুরে ইসলাম মৃধা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এসময় কারাফটকে উপস্থিত ছিলেন তার পিতা, দুই বোন ও এক ভাই। তবে পিতার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা ইসলামের ছেলে মিলন ও স্ত্রী মালা উপস্থিত ছিলেন না।
ইসলাম মৃধার মুক্তির সময় তার স্ত্রী মালা এবং মিলন উপস্থিত থাকবেন এমনটা আশা করেছিলেন কারাকর্তৃপক্ষ এবং মিডিয়াকর্মীরা। ইসমাইলের পিতা আব্দুল আজিজ বলেন, মিলন ও তার মা ঢাকায় থাকায় তারা আসতে পারেনি।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৪ বছর ৬ মাস ২৯দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন ইসলাম মৃধা। তার সাজা হয়েছিল ৩০ বছরের। সন্তান ও স্ত্রীকে মেনে নেয়ার শর্ত সাপেক্ষে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এর আগে যশোর কারাগারে গত ৩১ জুলাই তাদের ফের বিয়ে দেয়া হয়।
এরপর ঝিনাইদহ কারাগারে ইসলামের জামিন আদেশ পৌঁছুলে সেখান থেকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার তাকে মুক্তি দেয়া হল।
ছেলেকে নিতে কারাফটকে আসা ইসলামের পিতা আব্দুল আজিজ মৃধা অশ্রুনয়নে বলেন, ছেলেকে মুক্ত করতে পেরে তিনি অনেক খুশি। ইসলামের ছেলেকে তারা অনেক আগেই মেনে নিয়েছেন। তিনি পুত্রবধূ মালার পরিবারকে দায়ি করে বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এত কিছু হতো না।
মিলন তার পিতাকে কেন নিতে আসেনি জানতে চাইলে আজিজ বলেন, সে তার মায়ের সাথে ঢাকায় রয়েছে। তারা ঢাকা থেকে বাড়িতে আসবে।
জামিনে কারামুক্ত ইসলাম বলেন, তিনি খুব খুশি। সন্তান পরিবারসহ তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান। কারাগার থেকে বের হয়ে ইসলাম তার পিতা ও ভাই-বোনদের সাথে যশোর থেকে বাড়ি ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা হন।
২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইসলাম মৃধা প্রেম করে একই গ্রামের মালাকে বিয়ে করে। এরপর মালা অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়লে ইসলাম তাকে অস্বীকৃতি জানায়। সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি নিয়ে মালা ইসলামের বাড়ি গেলে তাকে বের করে দেয়া হয়। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি স্বাভাবিক নিয়মে মালার পুত্রসন্তান প্রসব করে। নাম রাখেন মিলন। মিলন ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মালার পিতা ইসলামের বিরুদ্ধে ২০০১ সালে ধর্ষণের একটি মামলা করেন ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ইসলামকে আটক করে। কিন্তু ইসলাম আদালতেও মালা ও তার সন্তানকে অস্বীকার করেন। এসময় মালার আবেদনের প্রেক্ষিতে পুত্র মিলনের ডিএনএ টেস্ট করা হলে তার পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হয়। আদালত ওই মামলায় ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডদেশ দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম আপিল করলে রায় বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও ইসলামের সাজার রায় বহাল থাকে। পরে আপিল রিভিউ আবেদন করেন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ইসলাম। ইসলামের করা রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি তখন বলেন, বর্তমানে ইসলাম মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে সে নিজ বাড়িতে তুলে নিতে চায়। ইসলামের আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক আদেশে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে কারাভ্যন্তরে ইসলাম ও মালার আবারও বিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারকে আগামী ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দু’পক্ষের আত্মীয়স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেয়ার পর তার জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়।