আজ - বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ১১:১৪

হলি আর্টিসান মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদন্ড

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলার রায়ে ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং একজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: মজিবুর রহমান আজ দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মামলার ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
রায়ে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগেন, মো: আবদুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়। এছাড়া রায়ে আসামি জাহাংগীর হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগেন, মো. আব্দুস সবুর খান এবং শরিফুল ইসলাম খালেদকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগেন, মো, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ৮/৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ওই আইনের ৮ ধারায় প্রত্যেককে ছয় মাসের সশ্রম কারাদন্ড এবং আইনের ৯ ধারায় প্রত্যেককে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একবছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দৃষ্টি আকর্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন আদালত। পাশাপাশি জিহাদ কায়েম করার লক্ষ্যে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করাও ছিল জঙ্গিদের উদ্দেশ্য।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য জনমনে আতঙ্ক তৈরি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তামিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় নব্য জেএমবি সদস্যরা গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালায়। তারা নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো চাপাতি দিয়ে ১৭ জন বিদেশি ও ৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। অনেককে গুরুতর আহত ও জিম্মি করে।
হলি আর্টিসান হামলার মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে তামিম চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে আদালতের পর্যবেক্ষণে। আদালত বলেন, আসামি আসলাম হোসেন র‌্যাশ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ‘আমি তখন তামিম ভাইয়ের কাছে গুলশান বা কোনো কূটনৈতিক এলাকায় আক্রমণের উদ্দেশ্য জানতে চাই। তামিম ভাই বলে যে আমাদের সংগঠন নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই গুলশান কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করা প্রয়োজন।’
২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। একই বছর ২৬ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার বিচার শুরু হয়। আজ মামলা দায়েরের তিন বছর চার মাস পর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামলায় ২১১ জনের মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
চলতি বছর ১৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা দিন ২৭ নভেম্বর ধার্য করেন।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, জঙ্গিরা ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিক ও ২ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে হত্যা করে। হামলায় রেস্টুরেন্টে ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন জনসহ ২২ জন নাগরিক প্রাণ হারান। জঙ্গিদের গ্রেনেডের আঘাতে নিহত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান। পরে অভিযানে ঘটনাস্থলে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
এ ব্যাপারে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়।
রায়কে কেন্দ্র করে আজ ঢাকার আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

আরো সংবাদ