আবুল বারাকাত :: ভয়াবহ ডেঙ্গুজ্বরকে সাথে নিয়ে এবছর (২০১৯) সালে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার ৬০০ জন রোগী।প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার ৫২ জন রোগী।
হাসপাতালে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি।হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পান আবুল কালাম আজাদ লিটু । তিনি যোগদানের পর থেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায়, মেশিনারিজ, অবকাঠামো উন্নয়নে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে।
তথ্য বলছে, এ বছর হাসপাতালে সংযোজন হয়েছে আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, কালার ডপলার আল্ট্রাসনো মেশিন, আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স এবং অপারেশন থিয়েটারে যুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি।
হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের সাথে নতুন করে চালু করা হয়েছে আইএমসিআই সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্স সেন্টার, মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয় সিসি ক্যামেরা, ডিজিটাল হাজিরা এবং উদ্বোধন করা হয় সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টার।
শিশুদের জন্য যুক্ত করা হয়েছে পেডিয়াট্রিক কক্ষ। আর গাইনি বিভাগে যুক্ত হয়েছে এসি ও ফ্রিজ। একই সাথে হাসপাতালের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে চালু করা হয়েছে হেভিজেনারেটর। এছাড়া শুরু হয়েছে হাসপাতালের চতুর্থ তলা সম্প্রসারণের নির্মাণ কাজ। এ বাদে ১২৮ স্লাইসের সিটিস্ক্যান মেশিন স্থাপনের অপেক্ষায় আছে।
এ বছরে (আজ পর্যন্ত) অন্তঃবিভাগে ৭৬ হাজার ৫৬৪ জন এবং জরুরি ও বহিঃবিভাগ থেকে মোট পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫০ জন রোগী সেবা নিয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৩১হাজার ৯৮০ জন, মহিলা তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬১৯ জন এবং ৯২ হাজার ৯১৫ শিশু রয়েছে।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সাথে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংযোজিত হয়েছে মেডিকেল কলেজ ফ্যাকাল্টি। ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নত সুযোগ-সুবিধা থাকায় আশপাশের রোগীরা উন্নত সেবা পাওয়ার আশা নিয়ে ছুটে আসেন এই প্রতিষ্ঠানে। সরকারও রোগীদের বিষয় বিবেচনা করে দিয়ে থাকেন সকল সুযোগ ও বরাদ্দ।
এর আগে ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে উন্নিত হয়।
তবে হাসপাতালটিতে রয়েছে চিকিৎসকের অভাব। একশ শয্যার জনবল ও মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দিয়ে এবং ডেপুটিশনে চিকিৎসক এনে চলছে সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরিতে ৭৫ জন চিকিৎসকের দরকার থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৫৫জন। এখনও শুন্য আছে ২০টি পদ। অপরদিকে বিগত বছরে হাসপাতালে সেবিকা সংকট নিরসন হলেও এই বিভাগে বাড়েনি সেবার মান।
এবছরের মাঝামাঝি সময়ে যশোরে আলোচনায় ছিল হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সংকটের বিষয়।
এ বছরের শেষের দিকে যশোর শহরের মশার উপদ্রব বৃদ্ধির কারণে ডেঙ্গু রোগী এবং বাতাসে বিভিন্ন ভাইরাস থাকায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ছিলো আলোচনায়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি থাকে। কিন্তু সে তুলনায় জনবল নেই। তাই রোগীদের সেবা দিতে যেয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসক ও রোগীদের। তবে চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেন রোগীদের সেবা দেওয়ার। এবছর রোগীরা হাসপাতালে পরীক্ষায় আধুনিক যুগের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের সেবা পাচ্ছে। তার পরও যে টুকু বরাদ্দ আসে তাই দিয়ে রোগীদের কল্যাণের জন্য কাজ করা হয়।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৮৬৭ সালে যশোরের তৎকালীন জমিদার কালীপদ ঘোষের প্রচেষ্টায় হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৪১ সালে ১০ শয্যার হাসপাতালটি ৬২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০০৩ সালে এটিকে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। ২০০৬ সালে করোনারি ইউনিট স্থাপনসহ এই হাসপাতালের সঙ্গে মেডিকেল কলেজ সম্পৃক্ত করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্টাফের পদ রয়েছে ৩৬৭টি।