স্টাফ রিপোর্টার।। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাধীনতার স্বাদ পেলেন না বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন৷ যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের রাজাকার ও তার দোসরদের হাতে আজও লাঞ্ছিত নিষ্পেষিত হচ্ছেন তিনি৷ দেশটা স্বাধীন করেই তবে ভুল করেছিলেন মকবুল! প্রশ্ন জনমনে। আজ রবিবার প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। দেশও স্বাধীন করেছি। কিন্তু আমাদের নরেন্দ্রপুর গ্রামের রাজাকারদের দোসর ও তাদের সন্তানদের হাত থেকে আজও আমরা রেহাই পাই নি।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় আমাদের গ্রামের তৎকালীন রাজাকার মানিক দফাদার , মােহাম্মদ দফাদার, উভয়পিতা- মান্দার দফাদার, নওশের দফাদার, পিতা- মানিক দফাদার, আমার বাড়িতে অগ্নি সংযােগ দেয় এবং লুটপাট করে আমার পৈত্রিক ০৪ (ঢার) একর জমি দখল করে নেয়। আমাকে হত্যার হুমকি দিলে আমি প্রাণভয়ে পালিয়ে যাই।
স্বাধীনতা বিরােধী চক্র ১৯৭৫ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরে স্বাধীনতা বিরােধী চক্র হিংস্র ও বেপােরােয়া হয়ে ওঠে। তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের নরেন্দ্রপুরে স্বাধীনতা বিরােধীচক্র রাজাকার পরিবারের সন্তান আতিয়ার দফাদার গং আমাদের মুক্তিযােদ্ধাসহ সাধারণ জনগণকে নির্যাতিত নিষ্পেষিত করে আসছে।
কখনাে ভূমি দখল করে দীঘি কাটা, সরকারি খাস জমি দখল করা, জোর করে মানুষের গাছ কেটে নেওয়া, এক কথায় তাদের কথার অবাধ্য হলেই নিরীহ জনগনের উপর চলে মারপিট ও নির্যাতন। সকল প্রকার অপকর্ম করে আসছে এই রাজাকার পরিবারের সন্তান আতিয়র দফাদার গং। তারই ধারাবাহিকতায় আমার ০৪ (চার) একর জমি জবর দখল করে নেয় এবং কোন প্রকার কথা বললে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসতাে।
আমার প্রতিবাদ করার সক্ষমতা না থাকায় মুখ বুজে এই অন্যায় অবিচার সহা করেছি। সে সময় তারা আমার পৈত্রিক সুত্রের জমি ০৪ (চার) একরজমি জোরপূর্বক দখল করে তারা ভােগ দখল করতে থাকে। আমি জমিতে আবার দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে তৎকালীন ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আতিয়ার দফাদার তার ভাই মৃত আনু দফাদার, নুরাে দফাদার, সিরাজুল দফাদার এবং মফিজ দফাদার আমাকে এবং আমার সন্তানদের কে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে এবং বেআইনি ভাবে মারপিট করে গুরুতর যখম করে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতা বিরােধী রাজাকারদের বিচার শুরু হলে ভিতরে ও বাইরে তাদের দৌরত্ব কিছুটা কমে আসে। স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আমার পৈত্রিক ০৪ (চার) একর জম ফেরত দেয়া। এতে করে আতিয়ার দফাদার গং এর গাত্রদাহ আরও বেড়ে দ্বিগুণ হয় এবং নানা রকম যড়যন্রে লিপ্ত হয়।
আমাদের পরিবারসহ এলাকার বিভিন্ন মানুষের উপর বিভিন্ন সময় তারা নানারকম জুলুম ও নির্যাতন চালাতে থাকে। এ পর্যন্ত তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নরেন্দ্রপুর গ্রামের সাখাওয়াত অপর পুত্র মােস্তফা কামাল, মহির উদ্দীন এর পুত্র ইশারত আলী, দুলাল সেনের পূত্র তাপস সেন, হায়দার আলীর পুত্র হাসান আলী, গােলাম আলীর পুত্র ইসমাইল হােসেন, আলীম উদ্দীন এর পুত্র সাইফুল ইসলাম, মৃত ওমর আলীর পুত্র ইকবাল ও জসীম, ইংগুল। মিস্ত্রীর পুত্র ইউসুফ আলী ও আসর আলী, শাহাজানের গর্ভবর্তী স্ত্রী , মৃতওয়াজেদ আলীর পুত্র আলী হােসেন সহ আরাে অনেকেই।
তাছাড়া তারা বিভিন্ন লােকের জমি দখল করে বড় বড় দিখী তৈরি করে রেখেছে।
তারা এখনও লেয়াকত আলীর ৭২ শতকজমি জোরপূর্বক দখলকরে রেখেছে। আমি এখনও ২৯ শতক জমি তাদের কাছে পাব।
সর্বশেষ ২৬ এপ্রিল রবিবার তাদের লিজ দেওয়াপুকুর থেকে জোর করে মাছ ধরা কে কেন্দ্র করে তারা আমার সন্তান সহ এলাকার আরও ০৩ জন কে পিটিয়ে গুরুতর যখম করে।
এই মর্মে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করা হয় এবং তারা উক্ত অভিযােগটি উঠানাের জন্য তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমাকি-ধামকি ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল।
গত ৩১ মে রিবাবার সন্ধ্যা ০৭.০০ টার দিকে নরেন্দ্রপুর কচাতলার কাছে মাফজুর দফাদার এর গভীর নলকূপের সামনে সলিং রাস্তার উপর আতিয়ার দফাদার গং এর ছত্র ছায়ায় থাকা মোহম্মদ আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, নুরু দফদারের ছেলে রাসেল দফাদার, মৃত আনোয়ার দফাদারের ছেলে বট্টু, আতিয়ার দফাদারের ছেলে রাসেল, সহ মােট ০৮ জন লিটু, আলী হােসেন, বাচ্ছু শেখ, শহিদুল ইসলাম,রানা শেখ, হাফিজুর রহমান, সুমন ও লালনের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়
ঐ সময় লিটু ও বাচ্চুর হাত ও পা ভেঙ্গে দেয়। আলী হােসেন কে মাথায় কোপালে সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায় উক্ত মারপিটের ফলে আরও ১০ জন গুরুতর আহত হয়। তারা দা, লাঠি, রড ও বিভিন্নপ্রকার দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার করে।
তাৎক্ষনিক আমি সহ এলাকাবাসী ঘটনা স্থলে গিয়ে তাদের কে উদ্ধার করি এবং দ্রুত তাদেরকে নিয়ে যশাের ২৫০ শয্যা বিশষ্ট জেনারেলহা সপাতালে ভর্তি করি এবং চিকিৎসক জানান যে, লিটু ও বাচ্ছুর অবস্থা আশঙ্কা জনক।
তারা হামলা করার পরে ও আমার ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে উল্টো ০২ টি মিথ্যা মামলা করেছে।ঘটনাটি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য পরবর্তীতে নিজেদের বিচলি গাদায় (খড়ের গাদায়) আগুন দিয়ে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ছে।
আগুন দেওয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শি ছিল নরেন্দ্রপুর পুশিল ক্যাম্পের ইনচার্জ ও ইউনিয়ন পরিষদের একজন চৌকিদার সহ এলাকার কয়েকজন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার পুত্র বাদী হইয়া কোতয়ালী মডেল থানায়
মোহম্মদ আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, নুরু দফদারের ছেলে রাসেল দফাদার, মৃত আনোয়ার দফাদারের ছেলে বট্টু, আতিয়ার দফাদারের ছেলে রাসেল, সহ মােট ০৮ জন কে আসামী করে একটি অভিযােগ দায়ের করে।
বর্তমানে আমরা প্রান ভয়ে নিজের বসত বাড়ী ছেড় এদিকে সেদিকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি ।
উল্লেখ করে মকবুল হোসেন একজন মুক্তিযােদ্ধা হয়ে মাননীয়প্র ধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও যশাের জেলা পুলিশ সুপারের নিকট সাহয্য চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাসেম বিশ্বাস, ইউপি সদস্য জাকির হোসেন, শহিদুল ইসলাম, মোস্তাফা কামাল, বিউটি বেগম প্রমুখ।