আজ - শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৯:৪৩

৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন কবি কালাম

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ ওরফে ‘কবি কালাম’ ৬৭ বছর বয়সে জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুল থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। সোমবার দুপুরে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সন্ধ্যায় আবুল কালাম এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার বিষয়টি জানান।

আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া গ্রামে। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগে। আগুনে তাঁর বই-খাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তাঁর পরিবার। কাজ শুরু করতে হয় তাঁকে। পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি তাঁর। তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর। ঢাকায় থাকাকালে বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাসজীবন কাটান। ২০১৩ সালে শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
শিক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। সুশিক্ষা মানুষের জীবন ও মনকে উন্নত করে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখে।
আবুল কালাম আজাদ

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। পড়াশোনার প্রতি দুর্বলতা থেকেই তিনি ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

পরীক্ষায় পাসের পর কেমন লাগছে, জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছোট ছেলে আরিফুলের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাসের খবরটি প্রথম জানতে পারেন তিনি। এসএসসি পাস করতে পেরে তাঁর খুব ভালো লাগছে। এই বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা ছিল তাঁর কাছে একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেই চ্যালেঞ্জে তিনি প্রাথমিকভাবে জয়ী হয়েছেন। এখন আরও অনেক দূর যেতে হবে।

তিনি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি। কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি।’ আবুল কালাম বলেন, শিক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। সুশিক্ষা মানুষের জীবন ও মনকে উন্নত করে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া আজ সন্ধ্যায় বলেন, স্বশিক্ষিত আবুল কালাম আজাদের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের খবর শুনে তিনি ও এলাকার লোকজন খুব খুশি হয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধরে পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করেছেন। তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

আরো সংবাদ